পোশাক শিল্প রক্ষায় পদক্ষেপ নিন

18

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। আর তার কঠিন প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সেসব দেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা অনেক কমে গেছে। এরই মধ্যে কয়েক শ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। ফলে ধুঁকে ধুঁকে চলছে অনেক কারখানা। সাব-কন্ট্রাক্টে চলা ছোটখাটো চার শতাধিক কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কারখানায় চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হিসাবে করোনা সংক্রমণের পর থেকে প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবি, এর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এক হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বেকার হয়ে পড়তে পারে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক। অন্য কিছু শিল্প খাতেও বড় ধরনের ধস নামতে পারে এবং বহু শ্রমিক কাজ হারাতে পারে। সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে দেশের অর্থনীতিতে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে রীতিমতো ধস নামতে পারে। শ্রমিক অসন্তোষ বেড়ে গিয়ে দেশে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
ভারতভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনায় বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চাহিদা ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে এই চাহিদা কমতে পারে ৪০ শতাংশের মতো। অদূরভবিষ্যতে একইভাবে অর্ডার বাতিল বা স্থগিতের ঘটনা ঘটতে পারে। আর তার ফলে অনেক কারখানাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ থেকে দেশের পোশাকশিল্পকে রক্ষা করতে হবে। সরকার এরই মধ্যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর আগে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল। অন্যদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলো অভিযোগ মালিকরা সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিলেও শ্রমিকদের স্বার্থ দেখছেন না। তাঁরা আরো বেশি করে সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য শ্রমিকদের জিম্মি করছেন।
বৈশ্বিক মন্দা ও দুর্যোগের এই কঠিন সময়ে চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সব পক্ষকেই আন্তরিক হতে হবে। আশা করি, সরকারের যথাযথ ও সময়োচিত হস্তক্ষেপে আমরা দ্রুতই এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।