কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্রিটেনে কয়েক মাসের মধ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা সর্বনিম্ন হয়েছে। ইরানে দুই মাসের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। পাকিস্তানে একদিনে করোনা আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে। লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একদিনে সারা পৃথিবীতে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার ৯১৩ জন। মারা গেছেন তিন হাজার ২৬৩ জন। সোমবার দিনের শুরুতে বিশ্বে ৩৫ হাজার ৫২৬ জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। মারা গেছেন ৯৫৭ জন। বিশ্বব্যাপী করোনায় সংক্রমিত হওয়া মানুষের বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছে ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফো। ওয়েবসাইটটির মতে, সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৮০ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪১ লাখ ৪১ হাজার ২৭৩ জন। এ্যাক্টিভ কেস রয়েছে ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৫২ জন। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ৫৪ হাজার ৪৬৯ জন।
ইরানে আবারও মৃত্যুর রেকর্ড : ইরানে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আবার বেড়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি দেশটিতে গত দুই মাসের মধ্যে করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির রেকর্ড। টেলিভিশনে দেয়া ঘোষণায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সিমা সাদাত লারি বলেন, তিন ডিজিটের পরিসংখ্যানটি ঘোষণা করা আজ আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক ছিল। মাননীয় মন্ত্রী যেমন বলে গেছেন, এই ভাইরাসটি অনাকাক্সিক্ষত। নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জমায়েত না হওয়া ও ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আশা প্রকাশ করে লারি জানান, আগামী দিনগুলোতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দুই ডিজিট এবং পরবর্তীতে এক ডিজিটে নেমে আসবে। এর আগে সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল করোনায় একদিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যুও খবর জানায় ইরানের কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১১ জন। করোনা পরিস্থিতির আপাত উন্নতির প্রেক্ষিতে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে লকডাউন শিথিল করতে শুরু করে ইরান। তবে শনিবার প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানিয়েছেন, লোকজন যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলে তাহলে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
ব্রিটেনে সর্বনিম্ন মৃত্যু : ব্রিটেনে গত কয়েক মাসের মধ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে করোনায় নতুন করে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২১ মার্চের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা সর্বনিম্ন। পরিসংখ্যান মিলিয়ে ব্রিটেনে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪১ হাজার ৬৯৮ জন। ইউরোপের কোন দেশে এটিই করোনায় সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা। আর বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই ব্রিটেনের অবস্থান। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার জানিয়েছে, ব্রিটেনে দুই লাখ ৯৫ হাজার ৮৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
পাকিস্তানে আরও ৯৭ মৃত্যু : পাকিস্তানে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫ হাজার ২৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৮ জনে। একদিনে মারা গেছেন ৯৭ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৭২৯ জনে পৌঁছেছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৩ হাজার ৭২১ জন। পাকিস্তানে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ শুরু হয়েছে পাঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে। ওই দুই প্রদেশেই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখের বেশি। পাক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, পাঞ্জাবে ৫২ হাজার ৬০১ এবং সিন্ধু প্রদেশে ৫১ হাজার ৫১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া খাইবার-পাখতুন খোওয়ায় ১৭ হাজার ৪৫০, বেলুচিস্তানে ৮ হাজার ২৮, ইসলামাবাদে ৭ হাজার ৯৩৪, গিলগিট-বালুচিস্তানে এক হাজার ৯৫ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ৬০৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৯ হাজার ৫৪৬ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, মোট পরীক্ষার সংখ্যা ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৫।
বিপর্যস্ত লাতিন আমেরিকা : লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলোতে যেভাবে মহামারী করোনার সংক্রমণ বেড়েই চলেছে তাতে উদ্বেগ ও আশঙ্কা বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় চিলি, আর্জেন্টিনা, পেরু ও কলম্বিয়ায় রেকর্ড সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। আর আরেক দেশ ব্রাজিল তো বিশ্বে শীর্ষ আক্রান্ত-মৃত্যুতে রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বাড়তে থাকায় অনেক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, লাতিন আমেরিকা এখন করোনা সংক্রমণ ও প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। অনেক দেশে সরকারের পর্যাপ্ত পরীক্ষা সক্ষমতা না থাকায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা রিপোর্ট হওয়ার চেয়েও বেশি। অঞ্চলটির শীর্ষ আক্রান্ত দেশ ব্রাজিলে নতুন করে একদিনে আরও ২০ হাজার ৮৯৪ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। যদিও দেশটিতে প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল অনেক পরে। চিলিতে মোট সংক্রমিত এক লাখ ৭৬ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। মেক্সিকোতেও পর পর তিনদিন ধরে করোনার আগের রেকর্ড ভেঙ্গে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। লাতিন অঞ্চলে ভাইরাসটিতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় মেক্সিকোর অবস্থান এখন চতুর্থ। এদিকে পেরুতে একদিনে রেকর্ড শনাক্তে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে সোয়া দুই লাখের বেশি, মৃত্যু সাড়ে ছয় হাজার।