নবীগঞ্জে ঠেলাগাড়ি চালিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশ্ব সরকার

5

নবীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
দরিদ্রতা দমাতে পারেনি নবীগঞ্জের বিশ্ব সরকারকে। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে বাবার সাথে ঠেলাগাড়ি চালিয়ে এ বছর ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে।
অদম্য মেধাবী বিশ্ব সরকার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের বিধূ সরকারের ছেলে। সে ২০১৪ সালে আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে ও ২০১৮ সালে অষ্টম শ্রেণীতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে।
তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় বিশ্ব সরকার। বাবা কষ্ট করে এক বোন ও এক ভাইকে ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে ও এক ভাইকে আলীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে পড়া-লেখা করাচ্ছেন। জমাজমি বলতে শুধু বসতভিটা। একমাত্র আয়ের উৎস ভ্যান চালানো। বাবা বিধূ সরকার অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার অর্থ থাকে না। তখন বাধ্য হয়ে বই কলম খাতা ছেড়ে হাতে নিতে হয় ঠেলাগাড়ি। কখনো বাবার সাথে ঠেলাগাড়ি চালাতে সহযোগিতা করতে হয়। সেখান থেকে প্রতিদিন তিন-চার শ’ টাকা রোজগার হতো। এত কিছুর পরেও থেমে থাকেনি তার লেখাপড়া। দিনের বেশির ভাগ সময় কাজ করলেও রাত জেগে চলত তার লেখাপড়া। অর্থের অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তবে তার স্কুলের শিক্ষক জন্মজয় রায় ও মিঠু দেব তাকে পড়া-শুনায় ব্যাপক সহযোগিতা করেছে। অদম্য এই মেধাবী বিশ্ব ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ডাক্তার হয়ে বাবার কষ্ট লাঘব করতে চায়।
বিশ্ব সরকার বাবা বিধূ সরকার বলেন, আমার ছেলে লেখাপড়ায় খুবই ভালো। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমি খুবই খুশি। সে লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চায়; কিন্তু আমাদের সামর্থ্য নেই। তবু স্বপ্ন পূরণে আমি দিন-রাত পরিশ্রম করে তার লেখাপড়ার খরচ জোগাড়ের চেষ্টা চালাব।
ইনাতগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদরুল আলম ইলাক বলেন, বিশ্ব সরকার একজন মেধাবী ছাত্র। তার পরিবার অত্যন্ত গরীব। আমার পক্ষ থেকে আমি যতটুকু পারি সহযোগিতা করব। তার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান তিনি।