শাবি থেকে সংবাদদাতা :
অনলাইন ক্লাস নিয়ে প্রশাসনকে দেওয়া শিক্ষার্থীদের ১২ দফা দাবি মেনে নিলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করবে।
শনিবার (৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শাহরিয়ার আবেদীন, শর্মিলা সিদ্দিকা মিলা, শারিকা শারমীন, ইশতিয়াক আহমেদ কর্তৃক প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে গত ৭ মে অনলাইন ক্লাসের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। পরে ১৭ই মে থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ১ জুন থেকে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসনকে ১২ দফা দাবি পূরন করার শর্ত বেধে দেয় শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে না নিলে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হল, ‘অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষা-কার্যক্রম চালাতে চাইলে সকল শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেককে ডেটা কেনার পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করে শিক্ষা-ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। একই সাথে পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক সমস্যা বিবেচনা করে ভর্তি ফি ও সেমিস্টার ফি মওকুফ অথবা কমাতে হবে।’
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাকসেসের সমান সুযোগ সুবিধা না থাকায় সরাসরি অনলাইন ক্লাস নেয়া যাবেনা। সেক্ষেত্রে রেকর্ড করা ভিডিও বা প্রয়োজনীয় কোর্স ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পৌছে দিতে হবে। একই সাথে ক্লাস-উপস্থিতির পূর্ণ নম্বর রাখতে হবে সকলের জন্য। সামাজিক, মানসিক অথবা নেটওয়ার্ক সমস্যাজনিত কারণে কেউ যদি ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারে তাদের ক্লাস করতে বাধ্য করা যাবে না।
যাদের ডিভাইস নেই এবং ডিভাইস ক্রয় করার মত আর্থিক অবস্থা নেই, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অনলাইন ক্লাস নেয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতির ব্যবস্থা করতে হবে।’
এছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে কোন রকম পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। কোন এসাইনমেন্ট দেওয়া হলে তার ডেডলাইন সেমিস্টার ফাইনাল পর্যন্ত দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে টার্মটেস্ট নিতে হবে।
ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন সাপেক্ষে কমপক্ষে দেড় মাস বা ততোধিক সময় রিভিউ ক্লাস নেওয়ার পর পরীক্ষা নিতে হবে।
এছাড়া যেসব ডিপার্টমেন্টে ল্যাব, প্রোজেক্ট ও থিসিস আছে তাদের এসব করার জন্যে কমপক্ষে আড়াই মাস সময় দিতে হবে।
সেমিস্টার ফাইনালসমূহের আগে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ পিএল এর ব্যবস্থা রাখতে হবে৷
এছাড়া সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলোর মাঝে ১ ক্রেডিটের পরীক্ষায় কমপক্ষে ১ দিন, ২ ক্রেডিটের ২ দিন, ৩ ক্রেডিটের ৩ দিন ও ৪ ক্রেডিটের পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪ দিন বন্ধ, যা সাধারণ নিয়মেই আছে তা নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি পরিবর্তন হলেও এই নিয়ম কোনভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না।
চলতি সেমিস্টার ২০ জুনের মধ্যে শেষ করার অযৌক্তিক দাবি প্রত্যাহার করতে হবে।
এদিকে যদি অনলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে একের অধিক সেমিস্টার শেষ করা হয় তাহলে সেমিস্টারের ক্রমানুসারে সেমিস্টার ফাইনাল নিতে হবে। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাস খুললে এবং সরাসরি ক্লাস চালু হলে প্রথমে চলতি সেমিস্টারের রিভিও ক্লাস, এরপর চলতি সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা; এরপর পর্যাপ্ত বিরতি দিয়ে পরবর্তী সেমিস্টারের রিভিও ক্লাস ও পরবর্তী সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা, এভাবে সেমিস্টারগুলো শেষ করতে হবে।
সকল অনলাইন ক্লাস সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫ টার মধ্যে নিতে হবে।
এদিকে ১২ টি দাবি পরিপূর্ণভাবে মেনে নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ ৩ কার্যদিবসের মাঝে লিখিত প্রজ্ঞাপন জারি করলে শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।