ক্লিনিকে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে ব্যবসায়ির মৃত্যু, ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশ

34
মৃত্যুবরণকারী ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকা।

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট নগরীর বিভিন্ন ক্লিনিকে ঘুরে ঘরে চিকিৎসা পান নি এক ব্যবসায়ী। তার চিকিৎসার জন্য আকুল আবেদন জানালেও মন গলে নি ঐ সব ক্লিনিকে চিকিৎসকদের। শেষ মেষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ঐ ব্যবসায়ী। মারা যাওয়া ব্যবসায়ীর নাম ইকবাল হোসেন খোকা। তিনি নগরীর বন্দরবাজারে অতি পরিচিত আর এল ইলেকট্রনিকসের কর্ণধার। অসুস্থ অবস্থায় তার পরিবার তাকে নিয়ে নগরীর সোবহানীঘাটের আল হারামাইন হাসপাতালে গেলেও তারাও ফিরিয়ে দেন। অথচ কিছু আগেও এই হাসপাতালে প্রায় ২০ হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছিলেন বন্দরবাজার আর এল ইলেকট্রনিকসের মালিক ইকবাল হোসেন খোকা। সেই ব্যবসায়ী যখন অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হতে একই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তখন তাকে নানা অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা না দেয়া এবং কালক্ষেপণ করায় করুণ পরিণতি হয়েছে ওই ব্যবসায়ীর-এমন অভিযোগ তার পরিবারের। অন্যদিকে, আল হারামাইন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ওই ব্যবসায়ী কোভিড-১৯ সন্দেহের রোগী ছিলেন তাই তাকে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার (৫ জুন) চারটি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা মারা গেছেন সিলেট নগরীর বন্দরবাজার আর এল ইলেকট্রনিকসের মালিক ইকবাল হোসেন খোকা।
পরিবারের অভিযোগ সকালে তারা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে নিয়ে নগরীর আল হারামাইন হাসপাতালে গেলেও সেখানে কোন চিকিৎসা পাননি।
ইকবাল হোসেন খোকার ভাই জাকির হোসেন জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তার ভাইকে আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা কোন চিকিৎসা দেয় নি। তারা নানা ফর্মালিটি দেখিয়ে সময় নষ্ট করলেও রোগীকে কোন চিকিৎসা করেনি। আমরা বার বার তাদেরকে অনুরোধ করেও তাদের সাহায্য পাইনি।
তিনি বলেন- গত কয়েকদিন আগেও তার ভাই এই হাসপাতালে প্রায় ২০ হাজার টাকার পরীক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু তবুও আজ তারা রোগীকে কোন চিকিৎসা করেনি।
এই ব্যাপারে আল হারামাইন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নাহিয়ান চৌধুরী বলেন, সকালে যে সময় ঐ রোগী আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তার আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল৷ তিনি গত ৩/৪ দিন আগে আমাদের হাসপাতালে ডা. শাহেদ আহমদকে দেখিয়েছিলেন। তখন ডাক্তার তাকে কিছু টেস্ট দেন এবং জ্বর, শ্বাসকষ্ট থাকায় করোনা পরীক্ষা করারও পরামর্শ দেন। আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকলেও আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা তাকে দ্রুত নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। আমাদের আইসিইউতে ৫-৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় আমরা করোনা সন্দেহভাজন রোগী কিভাবে আইসিইউতে নেব।
এদিকে, জাকির জানান- গত মঙ্গলবার (২ জুন) শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছিলেন ইকবাল হোসেন। কিন্তু এখনো তার রিপোর্ট আসেনি।
এদিকে এই ব্যবসায়ী হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার খবর শুনে তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার (৫ জুন) এসব হাসপাতাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিলেটের দায়িত্বে নিয়োজিত পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এক চিঠিতে মন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটের বেসরকারী হাসপাতালগুলো নানা অজুহাতে কোন রোগী গ্রহণ করছেন না। ভর্তি বা চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করায় দ্বিতীয় রোগী এ্যাম্বুলেন্সে মারা গেছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে একটি বৈঠক করুন। সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার সরকারের যে স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে সেটি জানিয়ে দেন। সাধারণ ও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকারকারী হাসপাতালগুলোর লাইসেন্স প্রয়োজনে স্থগিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান না কেউ না খেয়ে মারা যাক কিংবা বিনা চিকিৎসায় মারা যাক। সুতরাং চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না।’