কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিদ্যুৎ বিভাগের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ আটকে গেছে। চলতি অর্থবছরে এসব প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকায় আগামী অর্থবছরের সঙ্গে যুক্ত করার চিন্তা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘এডিপির কাজ অর্থবছরের শুরুর দিকে কম থাকে, যত দিন যায় গতি বাড়ে। শেষের দিকে এসে কাজ অনেক দ্রুত আগায়। এবার মার্চ মাসে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ করা যায়নি। সেগুলো আগামীতে কীভাবে করা হবে, আমরা তা নতুন করে ভাবছি।’ তিনি জানান, এ পর্যন্ত মোট প্রকল্পের অগ্রগতি ৬০ ভাগ। জুনের মধ্যে আরও ২০ ভাগ বাড়তে পারে। ফলে সব মিলিয়ে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি। মোহম্মদ হোসেইন বলেন, ‘বাকি কাজ যদি শেষ করা না যায়, তাহলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আগামী অর্থবছরের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আটকে থাকবে না।’
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এ কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে অনেক প্রকল্পের কাজ থমকে আছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এবার বিদ্যুৎ বিভাগের মোট প্রকল্প রয়েছে ৯৮টি। এরমধ্যে সঞ্চালন এবং বিতরণ কোম্পানির অধীনে থাকা ২১টি প্রকল্পের মধ্যে ১১টিতে কোনও কাজ হয়নি।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি প্রকল্প পর্যালোচনা বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাছাই করে দ্রুত কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি ওই বৈঠকে বলেছেন, ‘কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি সেগুলো বাছাই করে প্রতিবেদন দিতে হবে। মন্ত্রণালয় সেগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দেবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, কাজ শুরু না হওয়া প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু করতে আরও বিলম্ব হবে। চলতি অর্থবছরের বাকি আর মাত্র দুই মাস। সঙ্গত কারণে এই প্রকল্পগুলোর কাজ চলতি অর্থবছরে শুরু হবে বলে মনে হচ্ছে না। কোনও প্রকল্পের কাজ শুরুর জন্য সংশ্লিষ্টদের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হয়। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থ বিভাগ থেকে টাকা ছাড় করাতে হয়। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে যাচাই-বাছাই করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ না হলে এই অর্থ ফেরত যায়। পরবর্তী অর্থবছরে আবারও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। প্রতিমন্ত্রীর সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজ শুরু করতে না পারা ১১টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে. ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং অব পিজিসিবি, ভারতের সূর্যমণি নগর থেকে কুমিল্লা উত্তরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কুমিল্লা উত্তরে ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন নির্মাণ, আশুগঞ্জ ১৩২ কেভি পুরাতন এআইএস উপকেন্দ্রকে ১৩২ কেভি নতুন জেআইএস উপকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা, বড়পুকুরিয়া- বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ, ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি করার লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ঢাকা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রিড সঞ্চালন ব্যবস্থা সম্প্রসারণ, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় সমন্বিত সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প, মোল্লারহাট ১০০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির রিসোর্স অ্যাসেসমেন্ট ও পাইলটিং বিষয়ক কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড এলাকার পাঁচ লাখ স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন প্রকল্প, প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক দফতরের ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতের সূর্যমণি নগর থেকে কুমিল্লা উত্তরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কুমিল্লা উত্তরে ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন নির্মাণ— এই প্রকল্পটি আর হচ্ছে না। এইচভিডিসি সাবস্টেশনের মূল্য অনেক বেশি, এ কারণে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। এর বাইরে অন্য সব প্রকল্পই বাস্তবায়ন করতে হবে।’