কাজিরবাজার ডেস্ক :
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার মধ্যে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়েছে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মেনে তারা এখন নতুন শিক্ষার্থীও ভর্তি নিচ্ছে।
তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ফি আদায়ে নমনীয় হতে নির্দেশনা থাকলেও বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৭ মে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ইউজিসি জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলতি সেমিস্টারের অসমাপ্ত কার্যক্রম (পাঠদান, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন) অনলাইনেই শেষ করতে পারবে।
আরও বলা হয়, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমপক্ষে ৬০ শতাংশ আছে কেবল তারাই অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া জুনে অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরের সেমিস্টারের ক্লাস-পরীক্ষাও অনলাইনে নিতে পারবে।
তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন, টিউশন ফি, সেমিস্টার ফি ও নতুন করে ভর্তি রেজিস্ট্রেশনের ফিসহ যাবতীয় টাকা দ্রুত অনলাইনে পরিরেশাধ করতে তাদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।
নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এপ্রিল ও মে মাসে অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি তাদের মিডটার্ম ও সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেমিস্টার ফি জমা নিয়েছে মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে। এখন একই প্রক্রিয়ায় টিউশন ফি আদায়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির (আইইউবিএটি) মেকানিক্যাল ডিপার্টেমেন্টের এক শিক্ষার্থী জানান, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার ফি ও পরবর্তী সেমিস্টারের রেজিস্ট্রেশন ফি আদায় করে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের কাছে ফি আদায়ে নমনীয় থাকার নির্দেশনার মধ্যেও চাপ দেওয়ার কারণে বেশ কিছু অভিভাবক ইউজিসির কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘ইউজিসি থেকে দুই দফায় জরুরি পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া আছে। শিক্ষার্থীদের পারিবারিক অসচ্ছলতা ও সুবিধাবঞ্চিত বিষয় বিবেচনা নিয়ে তাদরেকে চাপ দেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে ডিভাইস না থাকলে পরবর্তীকালে তাদের এসব ক্লাসের সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রজ্ঞাপনের শর্ত ও নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফি আদায়ের জন্য চাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির বলেন, ‘ইউজিসি থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান সম্পর্কিত যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে যেতে বলা হয়। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’
শিক্ষার্থীদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ করছে তার মধ্যে রয়েছে- ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়।
এছাড়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির মতো কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও দ্রুত ফি জমা দিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বলে জানা গেছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সংক্রমক ব্যাধিটির বিস্তার রুখতে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ছুটি ৬৬ দিন পর তুলে নিয়েছে সরকার। গত রবিবার থেকে খুলেছে সরকারি-বেসরকারি অফিস। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনই খোলা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৫টি। তবে অনুমোদন পেলেও বেশ কয়েকটিতে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি।