প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ॥ এক পৌর কাউন্সিলর সহ ১১ জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ইত্যাদি অভিযোগে আরও ১১ জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চারজন ইউপি চেয়ারম্যান, ছয়জন ইউপি সদস্য এবং একজন পৌর কাউন্সিলর।
মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা হলেন কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়নের মো. আনোয়ারুল হক, বাজিতপুরের হালিমপুর ইউনিয়নের হাজী মো. কাজল ভূইয়া, বরগুনা সদর উপজেলাধীন এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মো. শাহনেওয়াজ এবং নলটোনা ইউনিয়নের হুমায়ুন কবীর।
সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলাধীন মজলিশপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাছান মিয়া, বরগুনার সদর উপজেলাধীন নলটোনা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হারুন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ, ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা. রানী এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা. ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি)।
সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত পৌরসভার কাউন্সিলর হলেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোলাইমান বাবুল।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে উল্লেখ করা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হক করোনোভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের সময় ত্রাণ কাজে সহায়তা না করে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন।
একই জেলার বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. কাজল ভূইয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত। করোনোভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদেক্ষেপ বাস্তবায়নে বিঘ্ন সৃষ্টি, এপ্রিল মাসের ভিজিডি খাদ্যশস্য বিতরণ না করা, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে ব্যর্থ এবং কারণ দর্শাতে বলা হলে নিজে জবাব না দিয়ে অন্যের মাধ্যমে জবাব দিয়েছেন।
প্রজ্ঞাপনগুলোতে আরও জানানো হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলাধীন মজলিশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য হারিছ মিয়া এবং ৭নং ওয়ার্ডের জনাব হাছান মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি নিয়মনীতির ব্যতয় ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
বরগুনা জেলার সদর উপজেলাধীন এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মৎস্য ভিজিএফ এর চাল ৮০ কেজির স্থলে ৬০ কেজি প্রদান, তালিকার বাইরেও অন্যান্যদের চাল প্রদানসহ দুজন গ্রামপুলিশকে চাল প্রদানের অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। একই উপজেলার নলটোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর ও একই ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হারুন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. হানিফ, ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা রানী এবং ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য মোসা. ছাবিনা ইয়াসমিন (পলি) এর বিরুদ্ধে জেলেদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম, ভুয়া টিপসইয়ের মাধ্যমে চাল উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ এবং চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ স্থানীয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
উল্লিখিত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের অপরাধমূলক কার্যক্রমের কারণে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পৃথক পৃথক কারণ দর্শানো নোটিশে কেন তাদেরকে চূড়ান্তভাবে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হবে না তার জবাব পত্র প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
আরেকটি প্রজ্ঞাপনে, চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোলাইমান বাবুলের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ জেলা প্রশাসক কর্তৃক তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আজ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এ নিয়ে মোট ৮৫ জন জনপ্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। এদের মধ্যে ২৮জন ইউপি চেয়ারম্যান, ৫১জন ইউপি সদস্য, একজন জেলা পরিষদ সদস্য, চারজন পৌর কাউন্সিলর এবং একজন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান।