কাজির বাজার ডেস্ক
চ‚ড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও কয়েক হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও খামখেয়ালিপনাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং যেতে না পারা কর্মীদের টাকা সুদ ও যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ ফেরত দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালযয়ের সচিব, জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এ সংক্রান্ত রিটে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
১৫ বছরে তিন দফায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। প্রতিবারই শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে চক্র বা সিন্ডিকেট গঠনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এরপর চক্রের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগ ওঠে।
২০০৯ সালে প্রথম দফায় বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।
এরপর ২০১৬ সালের শেষে খোলা হয় বাজারটি। তখন বাংলাদেশের ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি চক্র গড়েছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আবার বন্ধ হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ২০২২ সালে আবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে। চলতি বছর মার্চে মালয়েশিয়া জানায়, দেশটি আপাতত আর শ্রমিক নেবে না। যারা অনুমোদন পেয়েছেন, ভিসা পেয়েছেন, তাদের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে হবে। ১ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যাবে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। আপাতত নতুন করে কোনো কর্মী যেতে পারবেন না দেশটিতে। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো চার লাখ ৯৩ হাজার ৬৪২ কর্মীর ছাড়পত্র নিয়েছে।
এর মধ্যে চার লাখ ৭৬ হাজার ৬৭২ কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। বাকিরা যেতে পারেননি। চ‚ড়ান্ত ছাড়পত্র নিয়েও কয়েক হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে না পারা নিয়ে দেশের প্রায় সব সংবাদ মাধ্যম খবর-প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসব খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ ও আইনজীবী বিপ্লব পোদ্দার। এ রিটে প্রাথমিক শুনানির পর আদালত ৩০ জুন একটি মৌখিক আদেশ দেন। মালয়েশিয়া কÐে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আগামী সাত দিনের মধ্যে তা রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলা হয়। সে ধারাবাহিকতায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। এ প্রতিবেদন দেখে রুলসহ আদেশ উচ্চ আদালত। রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ এবং বিপ্লব কুমার পোদ্দার নিজেই রিটের পক্ষে শুনানি করেন।
আইনজীবী তানভীর বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের টাকা ফেরত দেওয়া, দায়ী অ্যাজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ এসব সুপারিশের বাস্তবায়ন দেখাতে পারেনি। ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীকে আদৌ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে কিনা, দিয়ে থাকলে কতটুকু ফেরত দেওয়া হয়েছে, কী প্রক্রিয়া দেওয়া হয়েছে এবং দায়ী অ্যাজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, নিয়ে থাকলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দেখাতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। যে কারণে আদালত সুপারিশের আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং এ ঘটনার হালনাগাদ তথ্য প্রতি তিন মাস পর পর প্রতিবেদন দিয়ে জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান এই আইনজীবী।