কাজিরবাজার ডেস্ক :
লঘুদন্ডে দন্ডিত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগরত এমন ২ হাজার ৮৮৪ কয়েদি বন্দীর সাজা মওকুফ করে মুক্তি দেয়ার জন্য কারা অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এসব বন্দী ইতোমধ্যেই সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত আদালতের রায়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। গত ২৯ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে সরকারের নির্দেশে ও বিশেষ ক্ষমতাবলে তিন ধাপে এসব বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীদের সবাই কয়েদি আসামি। কেউই বিচারাধীন কোন মামলার আসামি নয়। এরই অংশ হিসেবে শনিবার প্রথম দিনে সারাদেশের বিভিন্ন কারাগারের মোট ১৭০ কারাবন্দীকে মুক্তি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। রবিবার দ্বিতীয় দিনে আরও ৩৮৫ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, এর মাধ্যমে প্রথম ২ দিনে মোট ৫৫৫ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, তবে কোন বন্দীর আদালত দেয়া দন্ড মওকুফ করলেও একইসঙ্গে অর্থদন্ড প্রদান করায় রায়ে ঘোষিত অর্থদন্ড প্রদান না করা পর্যন্ত আইনানুযায়ী এসব আসামিকে কোনক্রমেই মুক্তি দেয়া হবে না। একইসঙ্গে তালিকা অনুযায়ী নির্ভুলভাবে বন্দী মুক্তির অংশ হিসেবে বাকি ২ হাজার ৩২৯ জন বন্দীকে সূক্ষ্মভাবে যাচাই বাছাই শেষে অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই মুক্তি দেয়া হবে বলে কারা মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন। ব্রিগেডিয়ার মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, সরকারী বিধি মেনে তিন ধাপে এসব আসামিদের মুক্তি দেয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত সাজা ভোগকারী কয়েদি বন্দী, এরপর ৩ মাসের উর্ধে সর্বোচ্চ ৬ মাস সাজা ভোগকারী তৃতীয় ধাপে ৩ মাস পর্যন্ত সাজা ভোগকারী বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে।
জানা গেছে, কারাগারে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য কিছু বন্দী মুক্তি দেয়া যায় কিনা এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি চিঠি দেয় কারা অধিদফতর। তালিকায় লঘুদন্ডে দন্ডিত ৩ মাস থেকে সর্বোচ্চ ১ বছর পর্যন্ত বন্দী রয়েছেন এমন ৩০৯২ জনের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে এসব বন্দীর সার্বিক তথ্য বিবেচনা ও যাচাই বাছাই শেষে ২ হাজার ৮৮৪ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এরপরই শুরু হয় বন্দী মুক্তির প্রক্রিয়া। জানা গেছে, লঘু দন্ডের আসামিদের সাজা মওকুফ করে বন্দীদের মুক্তি দিলেও নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি, শিশু ধর্ষণ, মাদক মামলার আসামিসহ অন্য গুরুতর অপরাধের মামলার আসামিরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। এই মুক্তির কোটায় নেই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, শনিবার ১০ বন্দীকে মুক্তির তালিকা আমরা পেয়েছি কিন্তু এর মধ্যে ছয়জনকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, বাকি ৪ জনের আদালতের রায়ে দেয়া অর্থদন্ড পরিশোধ না করায় তাদের মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। জরিমানা পরিশোধ করার পরই তাদের মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া রবিবার বিকেলে দ্বিতীয় দিন মোট ৪১ বন্দীর মুক্তির তালিকা আমরা পেয়েছি। তাদের মধ্যে আইনানুযায়ী জরিমানা থাকলে তা পরিশোধ করার পর বাকি সবাইকে মুক্তি দেয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে তালিকা অনুযায়ী ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কর্তৃক তাদের অবশিষ্ট কারাদন্ড মওকুফ করা হলো। তবে জরিমানার অর্থ আদায় সাপেক্ষে বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া অন্য কোন কারণে এসব বন্দীদের আটক রাখার আবশ্যকতা না থাকলে অবিলম্বেই মুক্তি দিতে হবে। উল্লেখ্য, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীগণের মধ্যে আদালত কর্তৃক সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সাজা প্রদান করা হয়। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, বাকি ২ হাজার ৩২৯ জন বন্দীর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ কারা মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্ভুলভাবে তালিকা যাচাই বাছাই শেষে অতি দ্রুতই এ সপ্তাহের মধ্যেই বন্দীদের মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে জানা গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চাপ কমাতে রবিবার দেশের কয়েকটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগারের ৫২ জন কয়েদির সাজা মওকুফ করে দিয়েছে সরকার। কয়েদিদের মধ্যে রাজশাহী কারাগারের ৩৩ জন, বরিশাল কারাগারের ৭ জন, হবিগঞ্জ কারাগারের ৫ জন, সিলেট কারাগারের ৪ জন, ফরিদপুর কারাগারের দুইজন এবং পটুয়াখালী কারাগারের একজন মুক্তিলাভ করে।