কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩১ লাখ ছাড়াল। বুধবার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগী মোট ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৮ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩২৪ জনের এবং সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৭৯ হাজার ২১২ জন। সবচেয়ে বেশি শনাক্ত রোগী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যা ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৫ জন। দেশটিতে মারা গেছেন ৫৯ হাজার ২৬৬ জন। যা বিশ্বে সর্বাধিক। এরপরই রয়েছে ইতালি। সেখানে মারা গেছেন ২৭ হাজার ৩৫৯ জন। আর স্পেনে মারা গেছেন ২৩ হাজার ৮২২ জন। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান রথকে ছড়িয়ে পড়া করোনায় চীনে মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৭ জন।
চীনের উহান শহরের দুটি হাসপাতালের বাতাসে করোনার উপস্থিতি পেয়েছেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। হাসপাতালগুলো থেকে নেয়া বাতাসের নমুনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্যের (আরএনএ) উপস্থিতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন তারা। জানিয়েছে, বাতাসের ওই কণাগুলোর বেশিরভাগেরই ব্যাস এক ইঞ্চির দশ হাজার ভাগের এক ভাগেরও কম। করোনা বাতাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, এ ধারণার পক্ষে চীনা বিজ্ঞানীদের এ তথ্যকে শক্তিশালী প্রমাণ বলা হচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে করা গবেষণায় করোনা বাতাসে থাকতে পারে বলে প্রমাণ মিললেও চীনা বিজ্ঞানীরা নমুনা নিয়েছেন বাস্তব পরিস্থিতি থেকে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন সেখানে থাকা ভাইরাস সংক্রামক কিনা তা এখনও জানা যায়নি। তবে ক্ষুদ্র এ তরলকণাগুলো সহজেই ব্যক্তির নিশ্বাসের সঙ্গে ও কথা বলার সময় নির্গত হতে পারে। কণাগুলো ভাসতে পারে ও শ্বাসের মাধ্যমে অন্যজনের শরীরে ঢুকেও পড়তে পারে। তরলকণাগুলো অন্তত দুই ঘণ্টা বাতাসে ভেসে থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ৫৯২৬৬ ॥ প্রায় দুই দশকের ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৫৮ হাজার ২২০ জন মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ ওই মৃত্যু সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। করোনা প্রাদুর্ভাবের শেষ এখনও অনেক দূর বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন অন্যতম শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. এ্যান্থনি ফাউচি। গবেষকরা চিকিৎসার কার্যকর উপায় বের করতে না পারলে আসছে শরতেও যুক্তরাষ্ট্রকে ভুগতে হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করেছেন তিনি। ফাউচি বলেছেন, গ্রীষ্মে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পুরোপুরি শেষ নাও হতে পারে এবং এর ফিরে আসা অনিবার্য। এরই মধ্যে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬৫ ছাড়িয়েছে গেছে। সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন। গত ১৮ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে এ সীমা অতিক্রম করেছে।
ব্রাজিলও ছাড়িয়ে গেল চীনকে ॥ করোনায় মৃত্যুর পরিসংখ্যানে চীনকেও ছাড়িয়ে গেল লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। দেশটিতে শেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে ৪৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারী হিসেবে দেশটিতে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ হাজার ৮৩ জনে। অন্যদিকে সরকারী হিসেবে চীনে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৬৩৩ জনে।
জার্মানিতে মৃত্যু বেড়ে ৬৩১৪ ॥ প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। দেশটিতে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৩১৪ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট বুধবার জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এ গত ২৪ ঘণ্টায় ২০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬ হাজার ৩১৪ জন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৫৯ জন। ইতোমধ্যেই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ২০ হাজার চার শ’ জন। দেশটিতে করোনার এ্যাক্টিভ কেস ৩৩ হাজার ১৯৮।
সিঙ্গাপুরে আরও ৬৮৪ আক্রান্ত ॥ অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৬৯০ জনের শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এদের মধ্যে ৬৮৪ জনই ডরমিটরি সম্পর্কিত। সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত নগররাষ্ট্রটিতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৬৪১ জন। নতুন শনাক্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ছয়জন সিঙ্গাপুরের নাগরিক বা স্থায়ী অধিবাসী। এর আগে, মঙ্গলবার ৫২৮ জন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা গত দুই সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে কম। এদিনের নতুন রোগীদের মধ্যে ৫১১ জনই ছিলেন ডরমিটরিতে বসবাসকারী অভিবাসী শ্রমিক।
সৌদিতে শপিংমল চালু ॥ করোনায় প্রাণহানি নিয়ন্ত্রণে আসায় একমাস পর সৌদি আরবে চালু হয়েছে শপিংমল। ১৩ শর্তে এসব বিপণিবিতান খুলে দেয়া হচ্ছে। শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রতি ফ্লোরে ওঠানামার জন্য সিঁড়ি ও এস্কেলেটর ব্যবহার করতে হবে। একান্তই বাধ্য হলে লিফটে সর্বোচ্চ দুজন আরোহণ করতে পারবেন। শপিংমল খোলা থাকার সময়ে সব মলেই মেডিক্যাল পরীক্ষার এবং জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
ভারতে রেকর্ড মৃত্যু ॥ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ছাড়াল। এ পর্যন্ত দেশটিতে এক হাজার আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। মোট আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৩৩২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। এটি দেশটিতে একদিনের সর্বোচ্চ রেকর্ড সংখ্যা। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাত হাজার ৬৯৫ জন। আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তারপর গুজরাট ও দিল্লী।
ইকুয়েডরে লাশের স্তূপ ॥ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে করোনা মহামারীতে সবেচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে পড়েছে ইকুয়েডর। সেখানকার একটি শহরে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসকেরা দৈনন্দিন যে পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন, এর ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন তারা। লাতিন আমেরিকায় করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কেন্দ্রস্থল হিসেবে গয়াকিলের একটি হাসপাতালের ভয়াবহ বর্ণনা দেন চিকিৎসকেরা। সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
করোনায় দুই ব্রিটিশ বাংলাদেশী ভাইয়ের মৃত্যু ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের নিউপোর্ট শহরের আপন দুই ব্রিটিশ বাঙালি ভাই এক ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেছেন। গত ২২ এপ্রিল তাদের মৃত্যু হয়। এর তিন সপ্তাহ পূর্বে তাদের পিতা গোলাম মোহাম্মদ মৃত্যুবরণ করেন।