কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানের ষষ্ঠতম দিবস অতিবাহিত করছি। মাহে রমজানের সঙ্গে যাকাত প্রদানের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আজ সে সম্পর্কে ২/৪ কথা। কোন ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর কমপক্ষে যে পরিমাণ মাল তার মালিকানায় বিদ্যমান থাকলে তার উপর যাকাত প্রদান করা ফরজ হয়, সে পরিমাণ মালকে ‘নিসাব’ বলে। বিভিন্ন মালের নিসাব বিভিন্ন ধরনের। যেমন রৌপ্যের নিসাব ‘বায়ান্ন তোলা’, স্বর্ণের সাড়ে সাত তোলা এবং নগদ টাকার নিসাব সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রুপা বাজার দরের ‘সমপরিমাণ’। ওই মালের চল্লিশভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। এ হিসাবে অতিরিক্ত মালের উপরও যাকাত ফরজ হবে।
বছরের শুরুতে ও সমাপ্তিতে নিসাব বিদ্যমান থাকা জরুরী। মাঝখানে কোন সময় এ পরিমাণ না থাকলেও যাকাত বাধ্যকর হবে। বছরের শুরুতে নিসাব পরিমাণ মাল বিদ্যমান থাকলে এবং শেষে না থাকলে বা এর বিপরীত হলে যাকাত প্রদান বাধ্যকর হবে না।
প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট স্কিম ও অনুরূপ নিরাপত্তামূলক তহবিলে জমাকৃত অর্থের যাকাত প্রতিবছর যথানিয়মে পরিশোধ করতে হবে। এ জাতীয় অর্থ বা সম্পদ মালিকের দখলে আছে বলে গণ্য হবে। -(ইসলামের যাকাত বিধান ১/৬১৭-৮)। চাকরিজীবীর প্রভিডেন্ট ফান্ডে সঞ্চিত অর্থ তার কর্তৃত্বে সোপর্দ না করা পর্যন্ত তার উপর যাকাত ধার্য হবে না।
কোন মালের একাধিক মালিক থাকলে এবং তাদের প্রত্যেকের অংশ পৃথকভাবে চিহ্নিত বা বণ্টিত না থাকলে এ মালকে যৌথ মালিকানাভুক্ত মাল বলে। এ প্রকৃতির মালের যাকাতের ক্ষেত্রেও একক মালিকানাভুক্ত মালে যাকাত বাধ্যতামূলক শর্তাবলী প্রযোজ্য হবে। মূল্যবান পাথর যেমন হীরক, মণিমুক্তা ইত্যাদির তৈরি অলংকারের উপর যাকাত ধার্য হবে না। এ বিষয়ে সব মাযহাবের ফকিহগণ একমত। -(মুয়াত্তা, ইমাম মুহাম্মদ-১৮৭)। বাড়ি-ঘর, দালানকোঠা ও যানবাহনের উপর যাকাত ধার্য হবে না। তবে এগুলো ভাড়ায় খাটিয়ে যে আয় পাওয়া যাবে তা মালিকের অন্যান্য আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে এবং যথানিয়মে এর উপর যাকাত ধার্য হবে। -(ইসলামে যাকাত বিধান, (১-৫৪২)।
ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাবের সমপরিমাণ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের সমপরিমাণ ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য হলে তার প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা যাকাত ধার্য হবে। ব্যবসায়ের কেবল আবর্তনশীল মূলধনের যাকাত প্রদান করতে হবে। ব্যবসায়ের স্থাবর সম্পত্তি, যেমন দালানকোটা, জমি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির উপর যাকাত ধার্য হবে না।-(ইসলাম কা কানুন মাহাসিল, পৃ. ৯৬-৭)। মসজিদ, মাদ্রাসা বা অনুরূপ জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির দ্বারা ব্যবসা করা হলেও তার উপর যাকাত ধার্য হবে না। যেসব মালের উপর সাধারণত: যাকাত ধার্য হয় না, সে সব মাল ব্যবসায়িক পণ্য হলে তার উপর যাকাত ধার্য হবে। যেমন পাথর, হীরক, মণিমুক্তা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, কাঠ, বই-পুস্তক, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি। যাকাতের হিসাব কালে মোট সম্পত্তি থেকে ঋণের মতো স্ত্রীর মোহর ও খোরপোষ বাবদ প্রাপ্য এবং সরকারকে প্রদেয় বকেয়া খাজনা বিয়োগ হবে।
যাকাতদাতার যাকাত প্রদানকালে বা মাল থেকে যাকাতের অংশ পৃথক করাকালে তার অভিপ্রায় থাকতে হবে যে, সে তার যাকাত পরিশোধ করছে। অভিপ্রায়হীনভাবে সব মাল দান করলেও যাকাত আদায় হবে না। এ বিষয়ে ফকিহগণের মতৈক্য রয়েছে। মহানবী (স.) বলেন, কাজের ফলাফল তার অভিপ্রায় (নিয়ত) অনুযায়ী বিচার্য।
যাকাত ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা পরিশোধ করা ফরজ। এ বিষয়ে ফকিহগণ একমত এবং হানাফী মাযহাবের এটাই গৃহীত মত। এ মাযহাব মতে কোন ব্যক্তি যাকাত পরিশোধে অযথা বিলম্ব করলে আদালতে কোন বিষয় তার গ্রহণযোগ্য নয়। যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্বে অগ্রিম পরিশোধ করলে তা ধর্তব্য হবে না। যাকাত ফরজ হওয়ার পর কিন্তু পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় আসার পূর্বে অগ্রিম যাকাতও প্রদান করা যায়।