আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
আগাম বন্যা ও করোনাভাইরাস আতঙ্কে হাওরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিক সংকটের কথা চিন্তা করে হাওরের কৃষকদের ধান কাটায় সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে সুনামগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলা প্রশাসন। যেখানেই ধান কাটার সমস্যা দেখা দিচ্ছে সাথে সাথে জেলা প্রশাসন,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক অরাজনৈতিকসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়ে ধান কেটে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদসহ প্রশাসেেনর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের নীলপুর বাজারের পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত দেখার হাওরে সরজমিনে গিয়ে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের সাহায্যে দ্রুত ধান কাটা,ধান মাড়াই ও শুকানো কার্যক্রম পরিদর্শন করে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এসময় লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ, মেম্বার নিজাম উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ অপু, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা কামাল আহমদ ও একেএম সাব্বিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় ৩,১৯,৩০০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধান আবাদ করা হয়েছিল। আজ সকাল পর্যন্ত ৫৮,৩০৭ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। ধানকাটার শতকরা হার হচ্ছে ৪০ ভাগ। দ্রুত ধানকাটার জন্য ইতিমধ্যে ১১০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন, ১১৮টি রিপার মেশিন প্রদান করা হয়েছে। সারা জেলায় একাজে ৯৮ হাজার ৪ শত ১৯ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মী ও প্রতিনিধিবর্গকেও ধান কাটার কাজে বিশেষভাবে আগ্রহী করা হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরকে মাঠে নামানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে স্কুল কলেজ মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যারা ধান কাটার কাজে সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত রয়েছেন তাদেরকে “কাটলে ধান পাবে ত্রাণ” নীতির ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, নগদ টাকা ও হাত ধোয়ার জন্য সাবান, মুখের জন্য মাস্ক ও ব্যবহারের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার এমনকি ধান কাটার কাস্তে পর্যন্ত প্রদান করা হচ্ছে। আমরা সকলকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে,এবার যেন অকাল বন্যা বা পাহাড়ী ঢলে আমাদের কষ্টার্জিত ফসল বানের পানিতে তলিয়ে না যায়। আমরা আশা করছি আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে জেলার সকল পাকা ধান কাটা সম্পন্ন করতে পারবো। আমাদের প্রচেষ্টা একটাই যাতে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করতে পারি। এবং কৃষকদের ফসল যেকোন মূল্যে তাদের গোলায় তুলে দিতে পারি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১২ হাজার ২ শত ২৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। আগাম বন্যার আশংকায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে ধান কাটার জন্য আমরা সকলকে উদ্ধুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। ছাত্র শিক্ষক ইমাম মুয়াজ্জিন, পুরোহিত, সেবাইত, কৃষক জেলে কামার কুমার, নেতা, সমাজকর্মী, দেশী বিদেশী, নারী-পুরুষসহ দলমত নির্বিশেষে সবাই ধান কাটার কাজে লেগে গেছে। মাননীয় জেলা প্রশাসক সবার মধ্যেই ধান কাটার জন্য যে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার সেই গণ জাগরণ সৃষ্টি করেছেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সদর উপজেলার সবগুলো হাওরের ফসল গড়ে তুলতে সক্ষম হবো আমরা।
চেয়ারম্যান আব্দুল অদুদ বলেন, আমরা সরজমিনে ধান কাটতে সরাসরি হাওরে এসেছি। এবং ইতিমধ্যে দেখার হাওরে এক তৃতীয়াংশ ফসল কাটা হয়ে গেছে। আমি ২ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে এইবারই প্রথম দেখেছি ধান কাটার জন্য প্রশাসনকে এত বেশী সিরিয়াস হতে। ইনশাআল্লাহ আগামী ৭ দিনে আমার লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের সকল পাকা ধান আমরা গড়ে তুলতে পারবো।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, যে ধান কাটতে আমরা ৭ দিন সময় লেগে যেত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হারভেস্টার মেশিন দেয়ায় ৭ দিনের ধান আমরা একদিনে কাটতে সক্ষম হচ্ছি। ধান কাটায় নিয়োজিত মহিলা শ্রমিক আয়েশা বেগম বলেন, শুনেছি বন্যা আইবো, করোনা কইয়্যা এক জাতের বেমারও আইছে এর দায় জানের ভয়ে আমরা মহিলা হওয়ার পরও ধান কাটায় লাগছি। বৃদ্ধ এক কৃষক বললেন, সরকারের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসে আমাদের ক্ষেতের ধান কাটায় শরীক হওয়ায় আমরা সত্যিই অসম্ভব আগ্রহ পাচ্ছি। আমরা আশা করবো তারা যেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমনিভাবেই আমাদের পাশে থাকেন।