মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলস্থ র্যাব-৯, অধিনায়কের মো.আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার) তার মাথায় চালের বস্তা। প্যাকেট করে পৌঁছে দিতে হবে কর্মহীন, অবহেলিত নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে ঘরে।
তার এসব চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল। র্যাব -৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের সকলের এমন মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা মানুষের মুখে মুখে। তিনি মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাসহ দুই জেলার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প।
করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধকালীন সময়ে কর্মহীন ও অবহেলিত নিম্ন আয়ের মানুষকে খাবার মূখে তুলে দিচ্ছেন। যেখানেই খবর পাচ্ছেন, সেখানেই ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাবার নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন র্যাব-৯, শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের ক্যাম্প কামান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তার একটি টিম।
২০ এপ্রিল সোমবার বিকাল ৪টার দিকে তার ফেসবুকে ওয়ালে লিখেছেন ‘অনেকেই জানতে চান, আমি একজন বিসিএস ক্যাডার অফিসার এবং র্যাব কমান্ডার হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যসামগ্রীর বস্তা নিজে বহন করি কেন? বোঝা নেওয়ার জন্য নিচের র্যাংকের লোকজন তো আছেই। আসলে এক্ষেত্রে আমার ভাবনাটা একটু ভিন্ন। আমি যদি আমার অধীনস্থ র্যাব সদস্যদেরকে বোঝা বহন করবার আদেশ দিয়ে নিজে খালি হাতে হাঁটতাম, তাহলে তারা হয়তো আমাকে স্বার্থপর একজন নেতা হিসেবেই চিহ্নিত করতো, যা তাদের কর্মস্পৃহা ও মনোবলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতো নিশ্চিত। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে অধস্তনদের সমান ভার নেওয়া, চাল-ডালের বস্তা মাথায়/হাতে নিয়ে সবার সামনে সামনে চলাই আমার নেতৃত্ব দানের স্টাইল। কাঁধের র্যাংক দেখে নয়, কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ হোক এখানে কমান্ডার কোন জন। অফিসাররা বোঝা মাথায় নিলে জাত চলে যাবে, বোঝা বহন করা শুধু নিচের র্যাংকের লোকদের কাজ- এমন অমানবিক ও মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা করোনা ভাইরাসের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় হোক।’
গত ১৫এপ্রিল তার আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, লাঠি হাতে নেওয়া আমার খুব অপছন্দের কাজগুলোর মধ্যে একটি। লাঠি হাতে কাউকে তাড়া করা আমার কাছে ওই ব্যক্তির মনুষ্যত্বের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রকাশকারী আচরণ বলেই মনে হয়। ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি যেমনই হোক, চাকুরীসূত্রে এই শ্রুতিকটু জিনিসটা হাতে তুলে নিতে হয় প্রায়ই। যেমন আজ…।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ৫০টি ছোটবড় বাজার ঘুরেছি। সবগুলোর ছবি দিলে আপনারা ধৈর্যহারা হবেন। সব জায়গায় অভিন্ন চিত্র। দূর থেকে দেখি বাজারে লোক সমাগম। বাজারের ওপর দিয়ে সাইরেন বাজিয়ে গাড়িবহর নিয়ে অতিক্রম করার সময় দেখি মুহূর্তে ভোজবাজির মতো সব গায়েব। বাজার পার হয়ে একটু দূরে যাওয়ার পর পেছন ফিরে দেখি আবার….। গাড়ি ঘুরিয়ে বাজারের দিকে সামান্য এগুতেই দেখি আবার সব গায়েব!!!! দিনভর এই ইঁডুর- বিড়াল খেলা আমাকে লাঠি হাতে নিতে বাধ্য করেছে।
সরকার /পুলিশ/ র্যাব আপনাদেরকে বাঁচাতে চাইছে। আর আপনি চাইছেন আত্মহত্যা। নানান সত্যমিথ্যা কথার বেড়াজালে আমাকে হয়তো সহজে ফাঁকি দিতে পারছেন, কিন্তু করোনা ভাইরাসকে??? এখুনি যদি সংশোধন না হন, সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে কিন্তু!!! আপনার সুমতি ফেরার অপেক্ষায়।
গত ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় র্যাব-৯ এর ক্যাম্প কমান্ডার মো. আনোয়ার হোসেন তার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন ‘দুই পা প্যারালাইজড হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এই হুইল চেয়ারেই আটকে আছে তাঁর জীবন। নড়াচড়া, টয়লেট, গোসলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ! মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছিল ক্ষুধার জ্বালা। এই চাচিসহ ওই এলাকার মোট ৮০ টি পরিবারের এই কষ্টে সামান্য প্রলেপ দেওয়ার বাসনায় ছোট কলেবরের বস্তাগুলো নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম তাদের কাছে।
কখনো কখনো মনে হয়, ক্ষুদ্র এ মানবজন্ম এখনই যদি শেষ হয়েও যায়, তাতে কোন আফসোস থাকবে না। এটা তেমনই এক মুহূর্ত।’
তিনি আরেকটি পোস্টে গত ১২ এপ্রিল রবিবারে তিনি লিখেছেন-‘মেথর পট্রিত রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি। অনেকেই বলতে পারেন, এক প্যাকেট খাবারে একটা পরিবারের কি হবে! হয়তো কিছুই হবে না। চোখের সামনে মেথর পরিবারের বাচ্চাদের খেতে দেখে মনে অসীম শান্তি পেয়েছি- আমার প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। খুব ভাল হতো প্রতি পরিবারে যদি এমন ৫/৬ টা করে খাবারের প্যাকেট দিতে পারলে! সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য তো নেই।
আমাদেরকে পরিষ্কার রাখতে তারা নিজেরা অপরিষ্কার হন প্রতিদিনই। সেই মেথর ভাইদের দুর্দিনে তাদের সাথে এক বেলা নিজের খাবার ভাগাভাগি করতে পেরে সত্যি মহাতৃপ্ত আমি, ভড়ৎ মড়ফ ংধশব. ধন্যবাদ উদ্দীপ্ত তারুণ্য, সাথে থাকার ও রাখার জন্য।’
জানতে চাইএল র্যাব-৯, ‘শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পের ক্যাম্প কামান্ডার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন (শামীম আনোয়ার) বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি, কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা নিজেদের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। যেখানে খবর পাচ্ছি মানুষ ক্ষুধার্ত আছেন, সেখানেই খাবার পৌঁছে দিয়েছি। সরকারি ত্রাণ বিতরণেও সহযোগিতা করছি,পাশাপাশা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবিক কাজগুলো করে যাচ্ছি।’