জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রকাশ্যে ও গোপনে নানামুখী তৎপরতা যে চলছে, তা স্পষ্ট। প্রভাবশালী দেশের ক‚টনীতিকেরা আসছেন, আবার ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে। বিদেশি ক‚টনীতিকদের সঙ্গে শুধু বিরোধী দল বিএনপির নেতারা দেখা-সাক্ষাৎ করছেন, তা নয়। সরকারি দল আওয়ামী লীগও আনুষ্ঠানিকভাবেই কথা বলছে। বোঝা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে আগ্রহ সমান। বিদেশিরা প্রায় সবাই যে আগামী নির্বাচনটা অংশগ্রহণমূলক হোকÑসেটা চাইছে, তাতে কারও কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের মানুষও একটি ভালো নির্বাচন দেখতে চায়। সব দল নির্বাচনে আসুক, ভোটাররা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হন, প্রতিদ্ব›দ্বী সব প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার বাধামুক্ত সমান সুযোগ পানÑএসব চাওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।
কিন্তু বিতর্ক আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আছে সমঝোতার ঘাটতি। সব দল একমত হয়ে চলবেÑসেটা প্রত্যাশিত না হলেও মোটা দাগে কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য না থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে না। আমাদের দেশ রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। ক্ষমতাসীন দল ও ক্ষমতার বাইরে থাকা দল এক ভাষায় কথা বলে না। দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল থাকলেও মূলত দুই দলের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে রাজনীতি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিÑএই দুই দলের মধ্যে মতৈক্য হলে অন্য দলগুলো বড় সংকট তৈরি করার সক্ষমতা রাখে না।
আগামী নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে বিএনপি তাতে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি চায় একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সেটা সম্ভব নয়। তাই বিএনপি সরকার পতনের আন্দোলনে নেমেছে। সংকট সেখানেই।
বিএনপি যদি সরকার পতনে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের ইচ্ছা পূরণ হলেও হতে পারে। কিন্তু সরকার পতনের কোনো আলামত এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এটা বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও অবাধ হবে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতার কারণে বিএনপি সরকারের কথায় আস্থা রাখতে পারছে না। এই আস্থার সংকট দূর করার ক্ষেত্রে বিদেশি ক‚টনীতিকেরা সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে পারবেন কি?
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ডেরেক শোলে ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ সফরের পর রাজনৈতিক মহলে এই আলোচনা চলছে যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা কি তাহলে বাড়ছে? ভারতের পররাষ্ট্রসচিব শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাদের সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও বর্তমান সরকার নিয়ে বড় বিরূপতার কথা শোনা যাচ্ছে না।
নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপিকে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করার চাপ কি একটু বাড়ানো হলো?