করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ॥ প্যানিক করবেন না শক্ত থাকুন সচেতন হোন

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্ক না ছড়িয়ে শক্ত ও সচেতন থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্যানিক (আতঙ্ক) করবেন না, শক্ত থাকেন, সচেতন হোন। সহযোগিতার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন বলে সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন, এনইসি শুরুর প্রথম এক ঘণ্টা করোনা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। করোনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্যানিক করবেন না, শক্ত থাকেন, সচেতন হোন। সহযোগিতার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মূল বার্তা হলো প্রতিরোধ করতে হবে, কাজও করতে হবে। করোনা বৈশ্বিক সমস্যা আমরা স্বীকার করি। বিশ্ব যে দিকে যাচ্ছে, আমরাও সেদিকেই যাচ্ছি। আমাদের নিজেদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তার মানে এই নয় যে আতঙ্ক ছড়িয়ে, কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে বসে থাকব। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধান দায়িত্ব হলো জনগণকে সুরক্ষা দেয়া। এ জন্য খুব সীমিত কিছু করার স্বাধীনতা আমাদের আছে। আমাদের সচেতন হতে হবে। এক ধরনের সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন। নিজেকে নিজে কোয়ারেন্টাইন করা। অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা কমিয়ে দায়িত্ব পালন করুন। তাই বলে দায়িত্বে আমরা ঢিলেমি দেব না। এসব কথাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এনইসি সভায় করোনাভাইরাস বিষয়ে হওয়া আলোচনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকারী অফিস বন্ধ করা হবে না। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাবধানে থেকে কাজকর্ম করবেন। অপ্রয়োজনীয় সভা-সেমিনার বন্ধ হলেও মন্ত্রিসভা ও একনেক বৈঠক চলবে। দেশের অভ্যন্তরে কোন জায়গা লকডাউন (বিচ্ছিন্ন) করা হবে না। তবে ধীরে ধীরে কড়াকড়ি আরোপ (টাইটেনিং) করা হবে। সরকারী অফিস বন্ধের সিদ্ধান্ত আছে কিনা? জবাবে তিনি বলেন, ‘না। আমরা কাজও করব, সুরক্ষাও দেবÑ এ হলো আমাদের নীতি। করোনার কারণে আমরা আমাদের কাজ থেকে পিছপা হব না। করোনা মোকাবেলা করব সামনে থেকে, কাজও পুরোপুরি আমরা করব।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কোন কোন মহল বলেছে, আমরা যেন এই মুহূর্তে মিটিং কমিয়ে দিই। হ্যাঁ, আমরা অপ্রয়োজনীয় মিটিং করব না। যেমন একনেক সভা, কেবিনেট সভা করতেই হবে। এগুলো বন্ধ উনি (প্রধানমন্ত্রী) করবেন না। আর যদি ছোটখাটো কোন সভা থাকে, আমি আমার দায়িত্বে বন্ধ করতে পারি। লকডাউনের বিষয়ে তিনি বলেন, লকডাউন করে প্যানিক সৃষ্টি করার মতো পরিস্থিতি আমাদের হয়নি। আমাদের জনগণ সংখ্যায় বেশি। আমাদের জনগণ লকডাউনে অভ্যস্ত নয়। অনেক সুশৃঙ্খল দেশ আছে সরকার যা অর্ডার দেয়, মেনে নেয় বিনা প্রশ্নে। সুতরাং সেসব দেশের সঙ্গে আমাদের তুলনা করা ঠিক হবে না। তবে লকডাউন নয়, পর্যায়ক্রমে টাইটেনিং (কড়াকড়ি) করার চেষ্টা করব। করোনার প্রভাবে সার্বিকভাবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, অবশ্যই সার্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। যেমন ধরুন, বাংলাদেশ বিমানের আয় কমে যাবে। রেল, বাস, স্কুলের আয় কমে যাচ্ছে। কোথায় না কমছে। এর প্রভাব আমাদের জাতীয় আয়ের ওপর পড়বে।
এরকম পরিস্থিতিতে কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশীরা ভাগ্যবান বলেও মন্তব্য করেন এমএ মান্নান। তিনি বলেন, বাজারে সাপ্লাই কমে আসবে। আপনি হয়ত এক বা দুই মাস পরে তিনবেলা না খেলেও দুইবেলা খাবেন। আপনি ভাগ্যবান যে একটা কৃষি পর্যায়ের দেশে বাস করছেন। কুমিল্লা, বগুড়া থেকে সবজি চলে আসবে। আমরা তো মা-চাচিদের কাছ থেকে লাউ-কুমড়া এনে দু বেলা খেতে পারব। অনেক দেশ আছে, রাত পোহালেই বিমানে সবজি নিয়ে নামে। প্রতিদিন সকালে বিমানে সবজি, দুধ, মাখন, পাউরুটি নিয়ে নামে সুইজারল্যান্ডে। তাদের তো এগুলো নেই। তাদের তো পানি আসে বাইরে থেকে, এমন দেশও আছে।