কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি সামনে আসলেও স্কুল কলেজ বিশ^বিদ্যালয় এখনই ‘বন্ধ করে আতঙ্ক’ বাড়াতে চায়না মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের চাপ থাকলেও দুই মন্ত্রণালয়ই তাকিয়ে আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে। শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ই বলছে, তারা এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে বলবে সেভাবেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, তারা জনসমাগম এড়ানোর কথা বলছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে কি না সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়।
করোনাভাইরাস নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে বিভিন্ন মহলের দাবির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এমন অবস্থানই পাওয়া গেছে। যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের জন্য শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর সাধারণ মানুষের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। তবে বুধবার শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি যে মত দিয়েছিলেন এখন পর্যন্ত সেই অবস্থানেই আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের কারণে এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মতামত না পাব, ততক্ষণ আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কোন মহল থেকে এ বিষয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ এনেছেন তিনি।
দীপু মনি বলেছিলেন, আমাদের দেশের সবাই ডাক্তার, সবার ডাক্তার হওয়ার দরকার নেই। বিষয়টা দেখার জন্য দেশে যোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিসিআর) আছে। তারা প্রতিদিন আপডেট জানাচ্ছে। তারা বলে দিয়েছেন কী কী করণীয়। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কেউ গুজব ছড়াবেন না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত আসছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর শনিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ইস্যু নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তবে এখনই বন্ধের মতো কোন পরিস্থিতি আমাদের সামনে আসেনি। করোনাভাইরাস থেকে আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তেমন কোন পরিস্থিতি হয়নি যে সকল স্কুল কলেজ বন্ধ করা দরকার। তাই আমরা এখনও বন্ধের কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুসারে পদক্ষেপ নেব। তারা যদি বন্ধের কথা বলে সে অনুসারে পদক্ষেপ নেব। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। বিষয়টি যেহেতু স্বাস্থ্যের সেজন্য তাদের সিদ্ধান্তের ওপরই আমরা পদক্ষেপ নেব।
অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম আল হোসেন। স্কুল বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তো এখনও বন্ধের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আপনারা কি ভাবছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, আমরা আলোচনা করছি। কিন্তু এখনও তো বন্ধের মতো কিছু হয়নি। বন্ধ করলে আরও আতঙ্ক বাড়ে কি না সেটাওতো দেখা দরকার। আতঙ্ক বাড়িয়ে তো কোন লাভ নেই। তারপরেও আমরা দেখি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি পরামর্শ দেয়।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অবশ্য বলেছেন, তারা জনসমাগম এড়ানোর কথা বলছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে কি না সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমরা বলেছি জনসমাগম এড়াতে হবে।
বুয়েট জবিতে আতঙ্ক : এদিকে করোনার কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় ক্লাসের কার্যক্রমে অংশ নেয়নি বুয়েটের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থী। শনিবার করোনা আতঙ্কে ক্লাসে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। কিন্তু অনেকে এক সঙ্গে ক্লাস করাও এক ধরনের জনসমাগম। এ থেকেও করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা আছে। তাই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।