টিলাগড় ইকোপার্কে ৩৩ পাখির মৃত্যু, প্রতিবেদন চেয়ে হাইকোর্টের রুল

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেটের টিলাগড়ে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের (সিলেট ইকোপার্ক) ৩৩ পশুপাখির মৃত্যুর বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদন চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ওই সংরক্ষণ কেন্দ্রের (সিলেট ইকোপার্ক) ৩৩ পশুপাখির জীবন রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, পশু সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, উপ বন সংরক্ষক ও তানহা এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত বুধবার একটি ইংরেজি দৈনিকে সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র যেন ‘কনডেম সেল’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, ৩৩ পশুপাখির মৃত্যুর বিষয়ে ওই ইকো পার্ক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান তানহা এন্টারপ্রাইজের দায়সারা পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ দায়ী কিনা, তার অনুসন্ধান প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ৩০ দিনের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও সংরক্ষণ কেন্দ্রটির নিরাপদ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পশুপাখিদের জীবন রক্ষায় সিলেটের টিলাগড়ের সংরক্ষণ কেন্দ্রটির পশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত পশু চিকিৎসক, নার্স দিয়ে দ্রুত একটি ইউনিট স্থাপনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের টিলাগড় ইকো পার্ক প্রাণীদের জন্য এক ভয়ঙ্কর মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েকমাসে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে অন্তত ৩৩টি প্রাণী ও পাখি মারা গেছে। টিলাগড় বিটের ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা চয়নব্রত চৌধুরী জানান, এর মধ্যে চারটি হরিণ, চারটি চুকার প্যাট্রিজ, চারটি ময়ূর এবং একটি জলা মোরগ মারা গেছে। এ ছাড়া, ২০টি লাভ বার্ড মারা গেছে কিংবা খাঁচা থেকে পালিয়েছে।
তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি বলে জানিয়েছেন প্রাণীদের তদারকি করেন এমন এক কর্মচারী। তিনি বলেন, মৃত প্রাণীর সংখ্যা ৫০টিরও বেশি হবে। কমপক্ষে আরও ১০টি প্রাণীর কোনো খোঁজ নেই।
প্রতিষ্ঠার মাত্র দুই বছরের মধ্যে এতগুলো প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অভিজ্ঞ জনবল ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবকে দায়ী করছেন প্রাণী অধিকার কর্মীরা। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সংরক্ষণ কেন্দ্রটি তানহা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ইকো পার্ক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ওই একই প্রতিষ্ঠান সাত লাখ ৫৭ হাজার টাকায় আবারও এক বছরের জন্য সংরক্ষণ কেন্দ্রটি ইজারা নেয়।
তানহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী আমাদের দায়িত্ব প্রবেশ ও পার্কিংয়ের টিকিট বিক্রি, পশুপালকদের পরিচালনা ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা পশুর যত্ন নিতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে দুজন প্রাণী রক্ষককে এনেছি। ফলে এ বিষয়ে কোনো সমস্যা নেই।’ তার অভিযোগ, সংরক্ষণ কেন্দ্রটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এটাই যাবতীয় সমস্যার কারণ।