কাজিরবাজার ডেস্ক :
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নয়, বিএনপির আক্রমণের টার্গেটই হচ্ছে মুজিববর্ষ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার দোসররা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা আসার বিরোধিতা করতে গিয়ে মুজিববর্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন বলেই আমরা মনে করি, এটা আজকে জাতিরও বিশ্বাস।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন, ঢাকার দুই নির্বাচিত মেয়র এবং ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে যৌথ প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এমন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, নরেন্দ্র মোদি কোন সাধারণ মানুষ নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাত্তরে আমাদের প্রধান মিত্র ভারতের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে মুজিববর্ষে যোগ দিচ্ছেন। নরেন্দ্র মোদির আসার প্রেক্ষাপট দিল্লীর সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্ন ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
যৌথসভায় দলের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আসলে নরেন্দ্র মোদির আগমন নয়, মুজিববর্ষ হচ্ছে বিএনপির আক্রমণের টার্গেট। কাজেই মুজিববর্ষ উদযাপনের যে জাগরণ সারা বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে এবং একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। কোন অশুভ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আজকে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এই চক্রান্ত ও অপতৎপরতাকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতে বলব।
তিনি আরও বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপন সামনে রেখে আমাদের দেশে আবার সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও তাদের দোসররা যে প্রপাগা-া করছেন, যে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, বাস্তবে আমি বলব তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতা করতে গিয়ে মুজিববর্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।
এ সময় মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই বন্ধন রক্তের বন্ধন। ১৭ মার্চ মুজিববর্ষের প্রেক্ষাপট বিশাল। ১৯৭১ সালে আমাদের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, সেই যাত্রায় আমাদের মিত্র ও প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভারতের জনগণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে ভারতের সেনাবাহিনীর রক্ত। তাই ভারতকে বাদ দিয়ে মুজিববর্ষ অর্থপূর্ণ হবে না। কারণ সেদিন বাংলাদেশের প্রধান মিত্রই ছিল ভারত।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষে নরেন্দ্র মোদি আসছেন, বিশ্বের অন্য দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও নেতারাও আসবেন। বিএনপি নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে কিসের অশুভ লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে আমরা জানি না। বাস্তবে মুজিববর্ষ সামনে রেখে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বে ঐতিহাসিক আয়োজন বিএনপি এবং তাদের দোসরদের সহ্য হচ্ছে না। এ জন্য আজ তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা আগমনের বিরোধিতায় অবতীর্ণ।
বিশ্বব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে বিএনপি মুজিববর্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা তার ঘাম, শ্রম, মেধা দিয়ে সারা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন। শেখ হাসিনার যে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, সেই জনপ্রিয়তাকে এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিএনপি ভয় পায়। তারা এরা মনে করছে, মুজিববর্ষ উদযাপনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়তেই থাকবে। এ জন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে ওবায়দুল কাদের বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের নামে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি হতে দেয়া হবে না। মুজিববর্ষের নামে চাঁদাবাজির দোকান যেন কেউ খুলতে না পারে। পরিমিতিবোধের মধ্য দিয়ে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মান জানাতে হবে, শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তাই আমরা যেন বাড়াবাড়ি করে বঙ্গবন্ধুকে ছোট না করি। খুব বেশি বঙ্গবন্ধুপ্রেমী হতে গিয়ে আমরা যেন বঙ্গবন্ধুর বিশাল ভাবমূর্তিতে কোন প্রকার আঁচড় না কাটি। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আমাদের এ বিষয়ে মনে করিয়ে দিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র প্রমুখ।