বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর বরাদ্দ বেড়েছে

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
১০ হাজার ৪৬৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার আট প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এরমধ্যে ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদন পেয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পও। অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলোতে সরকারী তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৫ হাজার ৯৬৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে ৪ হাজার ৪২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে পাওয়া যাবে ৭৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) শামীমা নার্গিস এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য মোঃ জাকির হোসেন আকন্দ।
একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম যমুনা নদীর ওপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প। যার ব্যয় বেড়েছে সাত হাজার ৪৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ফলে এ প্রকল্পের ব্যয় নয় হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। একই সঙ্গে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে।
বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় বাড়ার বিষয়ে বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেল সেতু হবে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রেল সেতু। মূল নক্সা ও স্ট্রাকচার পরিবর্তন হওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। জাইকা নতুন করে প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, ব্যয় বাড়বে। এসব নানা কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। বাড়তি ব্যয়ের চার হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)। এম এ মান্নান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি ডুয়েল লাইন সেতু হবে। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে ৩০০ মিটার উজানে এই সেতু নির্মাণ করা হবে। সেতুটি দিয়ে সিরাজগঞ্জসহ উত্তর অঞ্চলের জেলাগুলোতে ট্রেন চলাচল করবে।
২০১৬ সালে প্রকল্পটি যখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়, তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল নয় হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা। তখন জাইকার ঋণ ছিল সাত হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। নানা কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে এখন দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের পাশাপাশি সেতুটিতে রেল সংযোগও রয়েছে। তবে কচ্ছপগতিতে এগিয়ে চলে ট্রেন। কারণ, ট্রেনের আউটার সিগন্যালিং খাঁচা ভেঙ্গে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে কয়েকবার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা। এসব কারণে এবার বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের স্টিল রেলসেতু নির্মাণ করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর সমান্তরাল ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হবে সেটি। পদ্মানদীতে ১ দশমিক ৮ কিমি দৈর্ঘ্যরে লালন শাহ সড়ক সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেলসেতু যেভাবে পাশাপাশি অবস্থান করছে, একইভাবে যমুনায়ও বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেলসেতু স্থাপন করা হবে।
যমুনায় রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত হবে রেলসেতুটি। বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্ট (বিবিডব্লিউ) স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম থাকবে। সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও থাকবে। সেতুটি সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গ, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে আশীর্বাদে পরিণত হবে বলেও মনে করছে সরকার।
একনেকে অন্যান্য অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো ৭৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘জরুরী পানি সরবরাহ প্রকল্প’; এবং ৭৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার ‘আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্প’।
২৬৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের শেখপাড়া (ঝিনাইদহ) শৈলকুপা- লাঙ্গলবাঁধ (শ্রীপুর)-ওয়াপদা মোড় (মাগুরা) জেলা মহাসড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণ প্রকল্প’; ৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ‘রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী-২ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্প’; ৪৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার মুন্সীগঞ্জ থেকে খানপুরা এবং কাজিরহাট থেকে রাজধরদিয়া পর্যন্ত যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প; ৫৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একই মন্ত্রণালয়ের ‘কুড়িগ্রাম জেলার কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলাধীন ধরলা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ বাম ও ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প; ৫৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘পদ্মা নদীর ভাঙ্গন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ও শাজাহানপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প।
একনেক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এম মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীবর্গ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।