কাজিরবাজার ডেস্ক :
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েই চলেছে দিল্লিতে। ইতিমধ্যেই এক পুলিশ কনস্টেবলসহ ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দিল্লির মৌজপুর। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি শুরু হয়েছে। মুখ ঢেকে পাথর ছুঁড়তে দেখা গেছে কয়েকজনকে। আগুন লাগানো হয়েছে ২টি গাড়িতে। অশান্তির আশঙ্কায় বন্ধ রাখা হয়েছে ৫টি মেট্রো স্টেশন।
জাফরাবাদ, মৌজপুর-বাবারপুর, গোকুলপুরি, শিব বিহার ও জোহরি এনক্লেভ মেট্রো স্টেশনের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রেন দাঁড়াবে না। ওই এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি হয়েছে। দিল্লির আরও ১০ জায়াগায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের প্রথম দিনে পাথরবৃষ্টি থেকে গুলি, দোকানে-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া,সব কিছুরই সাক্ষী হয়েছে রাজধানী দিল্লি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলন ঘিরে অশান্তিকে কেন্দ্র করে এই প্রথম দিল্লিতে ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। মৌজপুরে পাথরের আঘাতে পুলিশের হেড কনস্টেবল রতন লালের মৃত্যু হয়। এরপর সোমবার বিকালে চাঁদবাগে ফুরকান আনসারি নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। রাতে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে মারা যান শাহিদ নামে এক যুবক। অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
সূত্রের খবর, আহত হয়ে তেগবাহাদুর হাসপাতালেই ভর্তি অন্তত ২০ জন। সোমবার জাফরাবাদ থেকে মৌজপুর পর্যন্ত সিএএর সমর্থনকারী ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশেরর সামনেই চলতে থাকে পাথরবৃষ্টি। পেট্রোল পাম্প, দমকলের গাড়ি, যানবাহনে আগুন লাগানো হয়।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মধ্যেই রাজধানী দিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে ফের রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ এলাকা। যার আঁচ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্রও। শহরের ভজনপুরা ও মৌজপুরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করে দু’পক্ষই। ভজনপুরাতে পুলিশের জিপ ও একটি রিকশা জ্বালানোর অভিযোগ উঠেছে। দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে নিহত হয়েছেন দিল্লি পুলিশের এক হেড কনস্টেবল।
এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরের সময় এই ঘটনাকে পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি। টুইট করে তিনি লিখেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের সময় দিল্লির এই অশান্তি একেবারেই পরিকল্পিত। সরকার এই অশান্তিকে কখনই সহ্য করবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, জাফরাবাদ এলাকায় বন্দুক হাতে এক যুবককে দেখা গিয়েছে। বলা হচ্ছে, মোট আটবার গুলি চালিয়েছে ওই যুবক। এমনকি ভাইরাল এক ভিডিওতে পুলিশকর্মীকে লক্ষ্য করেও বন্দুক নিয়ে হুমকি দিতে দেখা গেছে ওই যুবককে।যদিও তৎক্ষণাৎ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি ওই পুলিশ।মৌজপুর মেট্রো স্টেশনের সামনে এবং কবীর নগর এলাকাতেও অশান্তির খবর মিলেছে। ভাইরাল কিছু ভিডিওতে একদল যুবককে জয় শ্রী রাম বলতে শোনা গেছে।
আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিল্লির উপ-রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাহায্য চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। অন্যদিকে রাজধানীর ১০টি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। গুজরাট থেকে ফিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ জরুরি বৈঠক করবেন বলেও জানা গেছে। দিল্লি পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন উপ-রাজ্যপাল অনিল বাইজল।