পৃথিবীতে মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য আত্মাহুতি দেওয়ার বিরল দৃষ্টান্তের অধিকারী আমরা। এ জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করতে সেই গর্ব, সেই অহংকার নিয়ে বাংলা ও বাঙালির ভাষিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার সার্বক্ষণিক চেষ্টা তো করতে হবে আমাদের। উচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক এক রুল জারির মাধ্যমে সেই ঐতিহ্য ও কৃষ্টিকে এগিয়ে নেওয়ার পথে একধাপ অগ্রগতি সাধিত হলো। একুশে ফেব্রুয়ারিসহ সব জাতীয় দিবসে ইংরেজি (খ্রিস্টীয়) তারিখের পাশাপাশি বাংলা তারিখ লেখায় পদক্ষেপ নিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই রুল জারি করা হয়। সরকার ২১ ফেরুয়ারি ও ইংরেজি বর্ষের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা সন ঠিক করেছে। সেই হিসেবে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা তারিখ হবে ৮ ফাল্গুন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দাওয়াতপত্র বা কাগজপত্রে শুধুই একুশে ফেব্রুয়ারি উল্লেখ করা হচ্ছে। শুধু একুশে ফেব্রুয়ারি নয়, সব জাতীয় দিবসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। তাই ইংরেজি তারিখের পাশাপাশি বাংলা তারিখ লেখার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়।
মাতৃভাষায় যত সহজে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়, পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়, অন্য কোনো ভাষায়ই তা করা যায় না। মাতৃভাষা ছাড়া জ্ঞানচর্চাও পূর্ণাঙ্গতা পায় না। অথচ মাতৃভাষার চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। ইংরেজি সাল ও তারিখ আমরা যত সহজে বলে দিতে পারি, বাংলা সন তারিখ সেভাবে বলতে পারি না। বিশেষ করে বাংলা সন তো আমরা অনেকেই বলতে পারি না। এই অবস্থা কোনোভাবেই ভাষা আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই বাংলা সন ও তারিখের ব্যবহার বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বাংলা ও বাঙালির স্বকীয়তা তুলে ধরতে কাজ করে চলেছে। ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বন্ধ করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি আজ থেকে বাংলা সন তারিখ ছাপার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্বাস করে এভাবেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা সম্ভব।