নৌ ও স্থল বন্দরে সতর্কতা

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বব্যাপী ভীতি-সঞ্চারি করোনা ভাইরাস দেশের বিভিন্ন নৌ ও স্থলবন্দরে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের মংলা নৌবন্দর, যশোরের বেনাপোল, লালমনিরহাট এবং ফেনীর স্থলবন্দর রয়েছে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরে এই ভাইরাস প্রতিরোধে গঠন করা হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে মংলা বন্দরে। শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিনিয়ত এখানে কর্মরত বিদেশী নাবিকদের সংস্পর্শে আসছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও নেই তেমন সচেতনতা। অনুরূপ অবস্থা স্থলবন্দর বেনাপোলেও। সেখানে হ্যান্ড ডিটেক্টর থার্মোমিটারই ভরসা। আর বিকল্প শুধু থার্মাল স্ক্যানারের মনিটর। লালমনিরহাট বন্দরে সতর্কতা জারি করে বসানো হয়েছে হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার। কিন্তু ট্রাকচালক ও হেলপারদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে না। তাই ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি থেকেই যায়।
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মুখে রয়েছে মংলা বন্দর। চীনা নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে এ বন্দরে। বন্দরে জাহাজে আসা নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেই যথাযথ ব্যবস্থা। ফলে বিদেশী জাহাজের পণ্য খালাস বোঝাই কাজ করতে গিয়ে নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া স্থানীয় শ্রমিকদের মাধ্যমে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ ভাইরাস প্রতিরোধে বন্দর জেটিতে নেয়া হয়েছে প্রাথমিক প্রস্তুতি। তবে এই প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
মংলাবন্দর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোঃ আব্দুল হামিদ বলেন, বন্দর হাসপাতাল ও মংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৃথক দুটি আইসিলেটেট রুম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বহন বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে দ্রুত খুলনা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর ও সরিয়ে নেয়া যায় সেই লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরী বিভাগের একটি এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। তবে এ সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের আওতাধীন মংলা পোর্ট হেলথ বিভাগ পরিচালনা করছে। তবে বন্দর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওইসব কার্যক্রম তদারকি করছে মাত্র।
মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখরুউদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে, পণ্য থেকে নয়’ তাই প্রাথমিকভাবে এ বন্দরে আসা চীনাসহ বিদেশী নাবিক এবং নাবিকদের সংস্পর্শে যাওয়া শ্রমিক কর্মচারীদের বন্দর জেটিতে স্ক্যান করার ব্যবস্থা আছে। বন্দরের উন্নয়নমুখী ড্রেজিং প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে প্রায় অর্ধশত চীনা নাগরিক। আগামী ৬ মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হলে তারা নিজ দেশে পৌঁছাবেন। তাই এ সময়ের মধ্যে তাদের চীনে যাতায়াতের সম্ভাবনা খুবই কম।
হ্যান্ড ডিটেক্টর থার্মোমিটার : আইরিশ নাগরিক মি. হুগো ভারত হয়ে আসেন বাংলাদেশে। ওপারের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে পা রাখতেই মুখোমুখি হন স্বাস্থ্যকর্মীদের। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কিনা সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অনুমতি মেলে ইমিগ্রেশনের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনের। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি হওয়া আতঙ্ক কাটানোর পাশাপাশি তা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর্মীদের এমন তৎপরতাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখলেও বিদেশি ওই পাসপোর্ট যাত্রীর বক্তব্য, নোবেল এই ভাইরাস প্রতিরোধে বেনাপোলে নেয়া ব্যবস্থা অপ্রতুল।
চীনসহ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে চলছে পাসপোর্ট যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা। এ পর্যন্ত ভারত থেকে আসা ৫০ হাজারের অধিক পাসপোর্টযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও কারো দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ হাসানুজ্জামান জানান, ভারতীয়রা ছাড়াও স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় ছিলেন একজন আইরিশ নাগরিক, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক চারজন, কানাডিয়ান দুজন, একজন আমেরিকান, যুক্তরাজ্য ও নেপালের কয়েকজন নাগরিক। তবে করোনা আতঙ্ক দেখা দেবার পর এই পথে কোন চীনা নাগরিক আসেনি।
এর আগে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে বসানো হয়েছিল অত্যাধুনিক থার্মাল স্ক্যানার। এই স্ক্যানারের মাধ্যমে খুব সহজেই অতিরিক্ত তাপমাত্রাসহ শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব। করোনা ভাইরাস নির্ণয়েও এই ইমিগ্রেশনে চিকিৎসকদের প্রাথমিক ভরসা ওই থার্মাল স্ক্যানারটিই। তবে দীর্ঘ ৬ মাস ধরে স্ক্যানারের মনিটরটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। ফলে ওই স্ক্যানারের পরীক্ষা কতটুকু ফলদায়ক তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।