চার প্রকল্পের উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী ॥ সরকার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে

36
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নরসিংদীর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার প্রকল্প এবং রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) প্রান্তে যুক্ত হয়ে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিটাক, বিসিক ও বিএসইসি কর্তৃক সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রফতানি বাড়াতে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিটাক, বিসিক ও বিএসইসির সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের উন্নয়নকে তৃণমূল ও গ্রামভিত্তিক করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং নরসিংদীর ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কৃষি পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষি ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন, বিভিন্ন ফলমূল, তরিতরকারি সবজি উৎপাদন, মাছ-মুরগির ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি। এগুলো প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে অর্থাৎ ভ্যালু এ্যাড করতে পারলে আমরা যেমন বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হব, পাশাপাশি নিজের দেশের মানুষেরও যেহেতু ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে, সেখানে আমাদের বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। শিল্পায়নের সম্প্রসারণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতি- এটা কৃষিভিত্তিক ঠিক, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন। শিল্পায়ন যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রফতানি করার সুযোগও সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা- যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিই। তিনি বলেন, ‘আমরা ১০০টি শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল, তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযুক্ত জনশক্তি যাতে গড়ে ওঠে তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। আমাদের কথাই ছিল ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করেছি। এই সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি ঘর আমরা আলোকিত করব। আমরা আজকে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের সামনে আরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেটা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। একদিকে যেমন দারিদ্র্র্য বিমোচন করা, দেশের মানুষের সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নতি করা এবং বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। ডেল্টা প্ল্যান আমরা প্রণয়ন করেছি। ফলে জলবায়ু অভিঘাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায়, তা নিশ্চিত করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ, প্রণোদনা ও নগদ অর্থ সহায়তার মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতির গতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। তাই করোনার সময়েও আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনটাকেও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, দেশব্যাপী আমরা পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করাটা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা প্রতিটি শিল্প কলকারখানা থেকে শুরু করে যত প্রতিষ্ঠান আমরা তৈরি করছি, সেখানেই পরিবেশবান্ধব যাতে হয় তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। এমনকি গার্মেন্ট শিল্পের গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিজ সারা পৃথিবীতে ১০টার মধ্যে এখন সাতটাই কিন্তু বাংলাদেশে। পরিবেশ-প্রতিবেশের দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সরকার প্রধান বলেন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসারে ৫৭টি শিল্প নগরী আমরা স্থাপন করেছি এবং ১৩টি শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ আমরা শুরু করেছি। আর বেসরকারী খাতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমাদের কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা সম্প্রসারণ করা- এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা হাতে নিয়েছি। যার ফলে বাংলাদেশ অনেকটা অগ্রগতি লাভ করে। দ্বিতীয়বার আমরা যখন সরকার গঠন করি, তখন আমরা আরও অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। আমি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, তারা আমাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আজকে বাংলাদেশে উন্নয়ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ঘোড়াশাল এবং পলাশে দুইটি পুরাতন ইউরিয়া সার কারখানার স্থলে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর, শক্তি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব নতুন সার কারখানা ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। নতুন এ সার কারখানায় দৈনিক ২৮০০ মে. টন (বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মে. টন) দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।
এই প্রকল্পটিতে ঋণ সহায়তা প্রদান করায় জাপান ও চীন সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডাঃ আনোয়ারুল আশরাফ খান, শিবপুরের সাংসদ জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ মোঃ ইমদাদুল হক, প্রজেক্ট ডিরেক্টর রাজিউর রহমান মল্লিক, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও সুধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।