কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় নি সুপ্রিমকোর্ট। ওই বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে জমা হওয়া ১৪৪টি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ৩ বিচারপতির বেঞ্চে যৌথ মামলাটির শুনানি হয়।
এদিন স্থগিতাদেশ না দিয়ে মামলাটি ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে পাঠাল সর্বোচ্চ আদালত।
আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এ বেঞ্চ গঠিত হবে বলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের জবাব জানতে চার সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট।
প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, নাগরিকত্ব আইনে স্থগিতাদেশ জারি হবে কি না, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেবে ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া কেন্দ্রীয় সরকারের না জেনে কোনো স্থগিতাদেশ জারি করতে রাজি নন তারা।
তিন বিচারপতির ওই বেঞ্চে আরও ছিলেন বিচারপিতি এস আবদুল নাজির ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্না।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দেশ জোড়া বিক্ষোভের মধ্যেই এই আইনের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে ১৪৪টি আবেদন জমা পড়ে।
কেন্দ্রের পক্ষে উপস্থিত হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে ভেনুগোপাল বেঞ্চকে বলেন, ১৪৪টি আবেদনের মধ্যে সরকারের কাছে মাত্র ৬০টি আবেদনের অনুলিপি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই অনুলিপিগুলো না পৌঁছনোয় এখনই এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয় কেন্দ্রের পক্ষে।
এসব আবেদনের জবাব দেয়ার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আরও কিছুদিন সময় চান তিনি। এরপরেই কেন্দ্রকে জবাব দেয়ার জন্য আরও ৪ সপ্তাহ সময় দেন সুপ্রিমকোর্ট।
এদিকে বুধবারই প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বল বিরোধীদের হয়ে সওয়াল করতে উঠে আদালতের বেঞ্চকে সিএএ’র বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করার আবেদন করেন। পাশাপাশি যতদিন না পর্যন্ত এই মামলার কোনো সিদ্ধান্ত হয় ততদিন পর্যন্ত জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধীকরণের (এনপিআর) কাজ স্থগিত করারও আহ্বান জানান তিনি।
শীর্ষ আদালতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে করা আবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছে যে সিএএ অবৈধ এবং সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। আরও বলা হয়েছে, এই আইনটি সাম্যের অধিকারেরও পরিপন্থী।
কারণ এটি ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা বলে। কিছু আবেদনে আবার ১০ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া আইনটির প্রয়োগে স্থগিতাদেশ জারির আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনকারীদের তালিকায় বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। ওই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কংগ্রেস, ডিএমকে, সিপিআই, সিপিএম, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ বা আইইউএমএল, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন এবং কমল হাসানের মাক্কাল নিধি মায়াম।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের আগে আগত অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিরোধীদের মতে, এই আইন বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানে বর্ণিত দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তির পরিপন্থী। সিএএ’র বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে আন্দোলন চলছে। আন্দোলনে গোটা দেশে ইতিমধ্যে অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন।