কাজিরবাজার ডেস্ক :
বৃষ্টির কারণে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আজও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তখন শীতের প্রকোপ বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ যোগ হয়ে শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
তারা জানান, শনিবার দেশের চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড কুতুবদিয়া, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ও হাতিয়ায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে কিছু জায়গায় রংপুর রাজশাহী, ঢাকা ময়মনসিংহ, বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। অন্যত্র আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। দেশের নদী অববাহিকা এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় কুয়াশা ঝরতে পারে।
তবে আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃষ্টির প্রভাব কেটে গেলে তাপমাত্রা কমতে থাকবে। তারা জানায়, শনিবার থেকে দেশের তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। আজ থেকে তা আরও কমতে থাকে। তাপমাত্রা কমে গেলে আবারও শীত বাড়বে। এর সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ যোগ হলে শীতের প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে উত্তরের জনজীবনে আবারও দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘনকুয়াশা। রোদের দেখা যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রোদের তাপ পৌঁছাতে না পারার কারণে শীত বেড়ে গেছে। রাজনৈতিক ঢাকায় অবশ্য শনিবার রোদের তাপ ছিল বেশ ভালই। ঢাকা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বেশ। ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে দিনের ভাগের শীত অনুভূতি ছিল কম। তবে রাতের কমায় শীত অনুভূত হতে পারে।
চট্টগ্রাম : পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে দুদিন ধরে সারাদেশেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে ছন্দপতন ঘটেছে স্বাভাবিক জনজীবনে। পৌষের শীতের মধ্যে এমন বিরূপ আবহাওয়া দুর্ভোগে ফেলেছে পথচারীদের। বৃষ্টিপাত থেমে গেলে নেমে আসবে কনকনে ঠা-া। এমনটাই জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। মেঘলা আকাশ। সূর্যের দেখা তেমন মেলেনি। আগের দিন শুক্রবারও ছিল একই অবস্থা। পৌষের শীতে শুষ্ক আবহাওয়া, এটাই বাংলাদেশের প্রকৃতি। কিন্তু দুদিন ধরে মানুষকে চলাফেরা করতে হচ্ছে ছাতা মাথায়। সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। শীতের সঙ্গে বৃষ্টি যুক্ত হওয়ায় ঠা-ার মাত্রা বেড়েছে।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, মৌসুমি লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আজ রবিবারই আবহাওয়ার উন্নতি ঘটবে। দেখা যেতে পারে সূর্যের কিরণ। বৃষ্টি থেমে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হলেই জেঁকে বসবে শীত।
রাজশাহী : কদিন আলো ঝলমলে দিনের পর পৌষের শেষদিকে এসে ঘনকুয়াশার চাদরে আবারও ঢাকা পড়েছে রাজশাহী অঞ্চল। প্রকৃতির নিয়মে সূর্যোদয় হয়েছে ঠিকই। কিন্তু কুয়াশার কারণে তার বিচ্ছুরণ হয়নি। ফলে কুয়াশা ভেদ করে চলচল করছেন পদ্মাপাড়ের জনপদের মানুষ।
শনিবার ঘড়ির কাঁটায় সময় যখন বেলা ১০টা তখনও রাজশাহীর প্রকৃতি কুয়াশায় ঢাকা। সূর্যের সাধ্য হয়নি ঘন কুয়াশার সেই বৃত্ত ছেদ করার। তাই সবুজ বৃক্ষরাজিও যেন ধোঁয়াচ্ছন্ন রূপ ধারণ করেছে। শহরের পিচঢালা সড়কগুলোও ভিজেছে পৌষের শিশিরবিন্দুতে। দৃষ্টিসীমা ৫০ গজের মধ্যে নেমে এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমেছে ট্রেনের। ফলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আন্তঃনগরসহ বিভিন্ন রুটের ট্রেন দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে চলছে। এতে মানুষের নিরাপদ বাহন ট্রেনের আরামদায়ক ভ্রমণের স্বাদ এখন তিক্ত হয়ে উঠেছে। রেলভ্রমণ নিয়ে জনদুর্ভোগ গিয়ে ঠেকেছে অসহনীয় পর্যায়ে।
ঘন কুয়াশার কারণে রাজশাহী-ঢাকা, ঢাকা-রাজশাহী, খুলনা-রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর আর সময় ঠিক রাখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে রাজশাহী-ঢাকা ও ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর শিডিউল নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনা এড়াতে ভোর থেকে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে ছোট-বড় যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। বেলা যতই বাড়ছে কুয়াশাও যেন প্রকৃতির সবকিছুকে কোলের মধ্যে টেনে নিচ্ছে। টানা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সামান্য বিরতি চলছে গত তিন দিন থেকে। এতে সকাল থেকেই রৌদ্রোজ্জ্বল থাকছিল রাজশাহী। কিন্তু শনিবার সকালে হঠাৎই আবার বেড়েছে ঘন কুয়াশার দাপট।
গাইবান্ধা : বৃষ্টির পর জেলার সর্বত্র তৃতীয় দফায় আবারও হিমেল হাওয়াসহ ঘন ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে। দুপুরে হালকা রোদ উঠলেও কোন উত্তাপ ছিল না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে গোটা গাইবান্ধা জেলা। সেইসঙ্গে হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। হঠাৎ করে শীত শুরু হওয়ায় এবং রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ায় এ জেলার মানুষরা চরম বিপাকে পড়ে। হঠাৎ শুরু হওয়া এই শীতে জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ছিন্নমূলসহ চরাঞ্চলের মানুষরা বেশি দুর্ভোগের কবলে পড়ে। শীতে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্করা এতে কষ্ট পাচ্ছে বেশি। শহরের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এই সুযোগে গাউন মার্কেট ও গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ব্যবসায়ীরা কাপড়ের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েছে। ফলে অর্থাভাবে দরিদ্র মানুষদের পক্ষে শীতের কাপড় সংগ্রহ করা খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে ঘনকুয়াশার কারণে ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ অন্য নদ-নদীতে নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে মূল ভূমির সঙ্গে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রাতে ঘন কুয়াশার কারণে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চরাঞ্চলের মানুষদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ঘনকুয়াশা অব্যাহত থাকায় সরিষা গাছের ফুল ঝরে পড়ছে ও আসন্ন ইরি-বোরো বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।