সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি ডিজি ॥ ভারত থেকে অবৈধ কাউকে ফেরত নেয়া হবে না

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতে চলমান এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি) ও সিএএর (সিটিজেনশিপ এ্যামেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট) নিয়ে বিজিবি উদ্বিগ্ন নয়। এ ব্যাপারে এখনই সুস্পষ্ট করে কিছুই বলার নেই। তবে অবৈধভাবে কাউকে ভারতে বা ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিদায়ী বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে প্রায় এক হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের সঙ্গে জড়িত তিন জন দালালকেও আটক করা হয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশী নাগরিক বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে ২৫৩ মামলা দায়ের হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিজিবি সদর দফতরে আনুষ্ঠানিক এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, বিদায়ী বছরের ২৫ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে ভারতের এনআরসি ও সিএএ নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। কারণ ভারতের এনআরসি ও সিএএ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে বিজিবির উদ্বেগের কিছু নেই। নিয়ম মোতাবেক সীমান্তে কড়া পাহারা দেয়া হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে কোন ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ করতে দেয়া হবে না।
তিনি বলেন, বিদায়ী বছরে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে প্রায় এক হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করায় আটক করা হয়েছে তিন দালালকে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মোট ২৫৩ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
যারা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছে, তারা ভারতে চলমান এনআরসি বা সিএএর কারণে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। দায়েরকৃত মামলায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে শুধু তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। আটককৃত প্রত্যেকের বাড়ির ঠিকানা যোগাড় করা হয়েছে। সেইসব ঠিকানায় সরেজমিনে গিয়ে তদন্তও করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, তারা সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। তবে তাদের কাছে বাংলাদেশ বা ভারতের কোন নাগরিকত্বের কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য মাধ্যমে বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া গেছে। আটককৃতদের মধ্যে নারী, শিশু, পুরুষ ও তিনজন দালাল আছে। এর মধ্যে শুধু বিদায়ী বছরের নবেম্বর ও ডিসেম্বরেই অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক হয়েছে ৪৪৫ জন। এদের প্রায় সবাই কাজের সন্ধান ছাড়াও বিভিন্ন কারণে ভারতে গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, বিদায়ী বছরের আগস্টে ভারতের অসমের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করে। সেখানে রাজ্যটির বাসিন্দা হিসেবে প্রকাশিত তালিকায় ১৯ লাখ মানুষের নাম আসেনি। তারা ভারতের নাগরিক নয় বলে বলা হয়েছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক নয় বলে তাদের ভারত থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে বলে গণমাধ্যমে আলোচনা রয়েছে।
অসমের নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে বিতর্কের পর ভারত সরকার ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন (সিএএ) করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, খ্রীস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করে।
এরপর থেকেই সহিংস বিক্ষোভ চলছে দেশটির বিভিন্ন জায়গায়। এমন অস্থিরতার মধ্যেই বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল হয়ে যায়। তবে এনআরসি ও সিএএ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বরাবরই আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, এগুলো একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়, এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।
বিজিবি প্রধান আরও জানান, গত চার বছরের তুলনায় এ বছর সীমান্ত হত্যা সর্বোচ্চ। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নমিয়ে আনতে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে ২৭৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এছাড়া বৈঠকে মাদক, স্বর্ণ, অস্ত্রগোলাবারুদ ও জালমুদ্রাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া সীমান্তে বসবাসীকারী অনেকের আত্মীয়স্বজন দুই দেশের সীমান্তের খুব কাছাকাছি আছে। তাদের বিশেষ অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যাতায়াত করতে দেয়ার বিষয়টিও আলোচনায় ঠাঁই পেয়েছে। বিজিবিকে আরও আধুনিক করতে দুটি হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে। যার মধ্যে একটি চলতি মাসেই আসার কথা আছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকালাগোয়া জল সীমান্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্পিডবোট কেনারও পরিকল্পনা আছে। এছাড়া ফেলানী সম্প্রতি দিনাজপুর সীমান্তে এক শিশুসহ তিনজনকে হত্যার বিষয়টি বিচারাধীন আছে।
বিজিবি প্রধান জানান, নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে আগামী ৫ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। বৈঠকে বিজিবির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।