কঠোর লকডাউন ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ল

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আসার পর করোনার বিস্তার ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বের সকল বিধিনিষেধের সময়সীমা ৭ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হল।
করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকায় কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশে গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য সরকার সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এই সময়ে জরুরী সেবা ছাড়া অন্যসব অফিস-আদালত বন্ধ, যান্ত্রিক যানবাহনে যাত্রী বহনও নিষিদ্ধ। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির পাশাপাশি মাঠে আছে সেনাবাহিনী। জনসাধারণকে অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। রাস্তায় বেরিয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে করা হচ্ছে গ্রেফতার জরিমানা।
এই বিধিনিষেধ চার দিন গড়িয়ে গেলেও পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোন উন্নতি হয়নি, বরং আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় নতুন রেকর্ড হয়েছে এর মধ্যে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউনে পরিস্থিতির উন্নতি বুঝতে আরও অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা আগেই সংক্রমিত হয়েছেন।
২৭ জুন থেকে ৪ জুলাই, এই ৮ দিনে করোনাভাইরাসে মোট ১০১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাতে দেশে কোভিডে মৃত্যু সংখ্যা ১৫ হাজারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে রবিবার। এই ৮ দিনের প্রতিদিনই শতাধিক মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রবিবার ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা এযাবৎ কালের সর্বোচ্চ। এই আট দিনে সব মিলিয়ে ৬১ হাজার ৭৭৯ নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশে। এত কম সময়ে এত বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি মহামারী শুরুর পর।
লকডাউন শুরুর আগের দিন ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। পরের চার দিনের মধ্যে তিন দিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজারের ওপরে। রবিবার পর্যন্ত দেশে সব মিলিয়ে মোট ৯ লাখ ৪৪ হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে চলমান বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর পক্ষে রবিবার সুপারিশ করে কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
বিধিনিষেধে জরুরী সেবা দেয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারী-বেসররকারী অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। খোলা রয়েছে শিল্প-কারখানা। জনসমাবেশ হয় এমন কোন অনুষ্ঠানের আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। বিধিনিষেধ ভেঙ্গে বাইরে বের হওয়া ব্যক্তিদের প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।
বিধিনিষেধের বর্ধিত সময়েও মানতে হবে যেসব নির্দেশনা- সকল সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান-ওয়ালিমা, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আদালতসমূহের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিষেবা, যেমন- কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুত, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারী-বেসরকারী), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরী অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোন কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।