কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করছে। সরকার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য কাজ করছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার আছে, সেই সমান অধিকার নিয়েই সবাই থাকবেন। জাতির পিতার সেটাই স্বপ্ন ছিল।
সোমবার গণভবনে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সব ধর্মের মানুষকে সরকার সমান চোখে দেখে। আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য আমরা কাজ করি। আমরা প্রত্যেক ধর্মের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করি।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ সকলে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে, সমান সুযোগ নিয়ে বসবাস করবে। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তার নিজের সন্তানের জন্য সম্পদ দিয়ে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের মুসলমানরা যেমন ১০০ টাকার মাধ্যমে তার সন্তানদের সম্পত্তি হেবা করে দিতে পারেন, এই সুযোগ খ্রিস্টানদের ছিল না। আমরা আইন করে আপনাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে একই টাকায় এ ধরনের সম্পত্তি দেয়ার বিধান করেছি। ফলে আপনাদের সন্তানদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে খ্রিস্টান ধর্ম কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়। সেখানেও সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। ধর্মীয় উৎসব এলে আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আমরা কল্যাণ তহবিল থেকে টাকা দিই। এবারও আমরা টাকা দিয়েছি। কিন্তু সেটা কোন সংগঠনের জন্য নয়। চার্চের মাধ্যমে সেই টাকা বিতরণ হয়। সবাই যেন অন্তত একটু মিষ্টি মুখ করতে পারে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা ২০১২ সালে ট্রাস্ট ফর্ম করে দিয়েছি। আমরা অনুরোধ করব, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই তো অর্থশালী-সম্পদশালী আছেন, আপনারা কিন্তু অনুদান দিতে পারেন। প্রত্যেকটা ধর্মের জন্যই আমরা এটা করে দিয়েছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করে দিয়েছি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০১ সালের পর বিভিন্ন জায়গায় অনেক হামলা হয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার ওপর জামায়াত-বিএনপি হামলা করেছিল। যেখানে যেখানে চার্চ ধ্বংস করা হয়েছে, সেখানে যথাযথ মেরামতের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমাদের তো সৌভাগ্য বাংলাদেশ কার্ডিনাল পেয়েছে। সেই জন্য আমিও গর্ববোধ করি। এ জন্য পোপকেও আমি ধন্যবাদ জানিয়েছি। ভবিষ্যতে আমরা পোপের জন্য কনটেস্ট করতে পারব, সে সুযোগ আমাদের আছে। আমি আর কিছু বলতে চাই না। এ বিষয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সিদ্ধান্ত নেয়। আপনারা গণভবনে এসেছেন, গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মানুষের সেবা করার জন্যই রাজনীতি করতেন। মানুষ যেন দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পায়, সেজন্য তিনি কাজ করে গেছেন। যারা মানুষের জন্য কাজ করেন, তাদের কেন এভাবে ব্যথা পেতে হয়? আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলবই। সরকারের গত এক দশকের উন্নয়ন ও সফলতাগুলো তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে আগে দারিদ্র্যের হার ছিল শতকরা ৪১ ভাগ। বর্তমান সরকার তা কমিয়ে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। আমরা প্রত্যেক ধর্মের মানুষের জন্য, দেশের প্রতিটি স্থানে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ধর্ম-বর্ণ সব মানুষ এক হয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমরা চাই এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় খ্রিস্টান ধর্মীয় মানুষের কল্যাণে নেয়া সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সব খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে বড় দিনের শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় বড়দিনের সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর হাতে বড়দিনের শুভেচ্ছা কার্ড তুলে দেন কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রোমান ক্যাথলিক চার্চের বাংলাদেশে সর্বোচ্চ প্রতিনিধি কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সংসদ সদস্য জুয়েল আরেং, সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান লীগের সাধারণ সম্পাদক ড্যানিয়েল নির্মল ডি কস্তা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার।
নির্মল রোজারিও’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আবদুল্লাহ, চার্চ অব বাংলাদেশের মডারেটর বিশপ সুনীল মানকিন, ন্যাশনাল খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের ফেলোশিপের সভাপতি বিশপ ড. এলবার্ট পি মৃধা, সিএসবির যুগ্ম আহ্বায়ক গাব্রিয়েল রোজারিও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।