বিশ্বনাথে ভূমি নিয়ে বিরোধের জেরে একাধিক মামলায় হয়রানির অভিযোগ

2

সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার

ভ‚মি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের একাভিম গহরপুর গ্রামের মো. আব্দুল খালিকের পুত্র মো. মাহবুব আলম জনি। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে সিলেট নগরীর মিরাবাজার এলাকায় বসবাসকারী মৃত ছিদ্দেক আলীর পুত্র মো. আশরাফুজ্জামান আইজ্যাক একের পর এক ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা মামলায় তার জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে জনি অভিযোগ করেন, তাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দিয়ে ইতিমধ্যে প্রায় দেড়মাস জেল খাটানো হয়েছে। বর্তমানে আইজ্যাক পরিত্যক্ত একটি ঘরে আগুন ধরিয়ে তাকে ফাঁসাতে চাইছে। আইজ্যাকের দায়েরকৃত বেশ কয়েকটি মামলা ও জিডি পুলিশি তদন্তে মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
জনি বলেন, তার মামার বাড়ির সকলেই বর্তমানে প্রবাসী। যে কারণে তাদের সম্পত্তিসমূহ তাকে দেখাশুনা করতে হয়। তিনি বলেন, বিশ্বনাথের ধীতপুর মৌজায় একাভিম গহরপুর গ্রামে জেএল ৭৩ এর এসএ দাগ ২২৩ এবং নতুন দাগ ১৬৩৭-এ তার নানাবাড়িতে মোট ৮৪ শতক ভ‚মি রয়েছে। এর মধ্যে তার নানা মরহুম ইরশাদ মিয়া গংদের ৫২ শতক এবং নানার চাচাতো ভাই পাখী মিয়ার বাকী ৩২ শতক। পাখী মিয়ার মেয়ের জামাতা হলেন আইজ্যাকের ভাই শাফি আলী এপল। সেই সূত্রে এপল ও আইজ্যাক তার নানার অংশ থেকে ২০ শতক ভ‚মি জোরপূর্বক দখল করে পাখী মিয়ার অংশের সাথে মিশিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে বহুবার এলাকা ও বিশ্বনাথসহ বিভিন্ন উপজেলার মুরব্বিয়ানরা বসে সমাধানের চেষ্টা করলেও পাখী মিয়ার লোকজনের কারণে সমাধান সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে মুরব্বিয়ানরা কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত দেন ৫২ শতক ভ‚মি ইরশাদ মিয়ার। তাই আইজ্যাকদের নির্মিত দেয়ালটি ভেঙ্গে ফেলে দখলকৃত ভ‚মি মুক্ত করেন তিনি। সেই সূত্র থেকেই আইজ্যাক তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগে যায়।
জনি অভিযোগ করে বলেন, আইজ্যাকের এ ভ‚মিতে কোনো অংশিদারিত্ব নেই। তার পরও সে বাদি হয়ে দেয়াল ভাঙ্গার ঘটনায় একটি মামলা (নং ৮৮/২৩) দায়ের করে। যা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। একই সাথে ১৪৪ দ্বারায় আরেকটি মামলা দায়ের করে। যার নং ৪/২৩।
সংবাদ সম্মেলনে জনি আরো বলেন, মামলার রায় পক্ষে যাবে না আঁচ করতে পেরে আইজ্যাক ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে সে সিলেট নগরীর জনৈকা জেবা বেগমকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। ফরেন্সিক রিপোর্টসহ মামলাটি যে সাজানো তার অনেকগুলো প্রমাণ আদালতের নিকট দাখিল করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও জেবা বেগম টাকার বিনিময়ে এভাবে অংসখ্য মানুষকে মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছে। পুলিশসহ বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে আমরা এসব তথ্য পেয়েছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ মামলায় প্রথমবার জামিনের পর টাকার বিনিময়ে আইজ্যাক আবারও জেবা বেগমকে দিয়ে গত ২৫ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় একটি মিথ্যা জিডি করায়। এই জিডির প্রেক্ষিতে আদালত আমার জামিন বাতিল করেন। পরবর্তীতে কোতোয়ালি থানার এসআই হালিমা আক্তার জিডিটি মিথ্যা ও সাজানো উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দিলে আমার পুনরায় জামিন মঞ্জুর হয়। জেবা বেগম হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে গত ২৪ মে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে এই মামলাটিও এসআই হালিমা আক্তার তদন্ত করে সিআর মামলাটি মিথ্যা ও সঠিক নয় বলে আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জনি উল্লেখ করেন আইজ্যাক এভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসাতে না পেরে এখন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে। আইজ্যাক তার ঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগে আমাকে আসামি করে গত ২৭ জুলাই আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। এটিও সম্পূর্ণ সাজানো এবং আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। জনি বলেন, আইজ্যাক তার পরিত্যক্ত ঘরে সে নিজেই আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ মামলায় আদালতে সে কয়েকটি ছবি জমা দিয়েছে। এই ছবিগুলো অন্য কোনো এলাকার। যার প্রমাণ পেয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের ইন্সপেক্টর কমর উদ্দিন। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ছবির সাথে ঘরের কোনো মিল পাননি। এমনকি আইজ্যাকের কেয়ারটেকার তজই মিয়া ও তার স্ত্রী বলেছেন কারা আগুন দিয়েছে তারা তা দেখেননি। গ্রামের লোকজনও তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন এটি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। এছাড়াও আইজ্যাক বিভিন্ন অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আমার মানহানি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। জনি বলেন, আইজ্যাক ও তার সহযোগী জেবা বেগম আমার ও আমার পরিবারের জীবনযাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ব্যবসায়িকভাবে আমাকে বিরাট ক্ষতির মুখে ফেলেছে। তিনি এই চক্রের হয়রানি থেকে রক্ষায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।