কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দাবদাহ আরও দু’দিন থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা জানিয়েছে আগামী সোম অথবা মঙ্গলবার নাগাদ দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টি হলেই কেবল তাপমাত্রা কমে আসবে। তখন লু হাওয়ার মতো তাপপ্রবাহের থেকে মুক্তি মিলতে পারে এমনটাই বলছে আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড় ফণী চলে যাওয়ার পর থেকেই তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ফলে সারাদেশে তীব্র গরমে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। কর্মজীবী মানুষেরা হাঁফিয়ে উঠেছে। লু হাওয়ার মতো তাপপ্রবাহ এতটাই বাড়ছে যে বারোটার পর থেকেই বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। দুপুর নাগাদ রাজধানীতে যান চলাচল কমে যাচ্ছে। প্রয়োজন ছড়া ঘর থেকেই কেউ বের হচ্ছেন না। গরমে ঘরে বসে বা ছায়ার নিচে অবস্থান করেও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। রোজার কারণে এই গরমে পানি পান করতে পারছেন না রোজাদাররা। দুপুর একটার পর থেকে রোজাদারদের দুর্ভোগ চরমে উঠছে। প্রচ- কষ্ট সহ্য করেই রোজা পালন করতে হচ্ছে তাদের।
ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে গত ৩ ও ৪ মে রাজধানীসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। কিন্তু ফণী চলে যাওয়ার পর থেকেই অব্যাহতভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা। দেশে বর্তমানে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকদিনই তাপমাত্রা বেড়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রচ- গরমে মানুষের ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাজশাহীতে শুক্রবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বিগত কয়েকদিন যাবত রাজশাহীতেই তাপমাত্রা সর্বোচ্চ উঠে যাচ্ছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী রাজধানীর ঢাকার তাপমাত্রা প্রত্যেকদিন বেড়েই চলেছে। আগের দিন বৃহস্পতিবার ঢাকায় যেখানে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। একদিনের ব্যবধানে সেখানে শুক্রবার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া গেছে ৩৬.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ফণী চলে যাওয়ার পর এর প্রভাবে বাতাসে জলীয় বাষ্প প্রচুর পরিমাণে মিশে আছে। এই জলীয় বাষ্প প্রচ- রোদে উত্তপ্ত হয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে। তারা জানান পশ্চিমা লঘুচাপের কারণেই মূলত মেঘ সৃষ্টি ও বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটে। ফণীর প্রভাবে সেই পশ্চিমা লঘুচাপটি সরে যাওয়ায় বৃষ্টিপাতের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া ফণীর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে পূবালী বাতাস সরে যায়। বর্তমানে স্বল্পমাত্রায় এটি ফেরত এসেছে। আগামী ১৩ মে’র মধ্যে পশ্চিমা লঘুচাপটি বঙ্গোপসাগর এলাকায় চলে আসবে। পূবালী বাতাসের সঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপ যোগ হলে তখন বৃষ্টিপাতের একটা সম্ভবনা দেখা দিতে পারে।
নওগাঁ : কয়েকদিনের তীব্র রোদে নওগাঁ অঞ্চলে আগুনের হল্কা বইছে। দিনের বেলায় কখনও কখনও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী ছেড়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রচ- তাপদাহে সারাদেশের মতো পুড়ছে নওগাঁ জেলাও। অসহনীয় গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে রোজাদাররা। গরমের হাত থেকে রেহায় পেতে মানুষের মধ্যে যেন হাহাকার পড়ে গেছে।
তীব্র রোদ আর অসহনীয় গরমে দুপুরে শহরের রাস্তাঘাট একদম ফাঁকা। ফুটপাতের দোকানিরাও বসছে না। ক্ষুদ্র যানবাহন বিশেষ করে রিক্সা-ভ্যানও চলছে না। গরমে মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে তীব্র গরমে মাঠের বোরো ধান কাটার কামলা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মাঠের ধান পেকে ঝুনা হয়ে গেছে। এই পাকা ধান ক্ষেত থেকে ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। কিন্তু ৬শ’ টাকা মজুরিতেও কামলা মিলছে না। তীব্র রোদ আর অসহনীয় গরমে কামলারাও মাঠে ধান কাটতে যেতে চাইছে না। এই সবকিছুর জন্য অসহনীয় গরমকেই দায়ী করছে কৃষকরা। এমনকি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো বোরো পাকা ধান ঘরে তুলতে অনেক কৃষকরা প্রতিমণ ধানের বিপরীতে (অর্থাৎ প্রতি ৪০ কেজিতে ২০ কেজি ) ২০ কেজি করে ধান দিয়ে ধান কাটার শ্রমিকদের দিয়ে মাঠ (জমি) থেকে ধান কেটে এনে ঘড়ে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক।
প্রচন্ড গরমে মানুষের পাশাপাশি প্রাণীকূলেরও নাভিঃশ্বাস। এদিকে অসহনীয় গরমে মানুষের শরীর থেকে ঝড়ঝড় করে ঘাম ঝড়ছে। পানিশূন্যতাসহ ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বৃদ্ধ এবং শিশুরাই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে বেশি।