কাজিরবাজার ডেস্ক :
ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুত। আজ শনিবারই নির্ধারিত হবে আওয়ামী লীগের বর্তমানে পদে থাকা ও পদপ্রত্যাশীদের ভাগ্য। আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে আজ নির্বাচন করা হবে দলটির আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব।
টানা নবম বারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ৩৮ বছরে দলটির নেতৃত্বদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সবারই দৃষ্টি সাধারণ সম্পাদক পদটির দিকে। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক? ওবায়দুল কাদের নাকি চমক দেয়ার মতো অন্য কেউ? কে নতুন পদ পাচ্ছেন, কারা পদ হারাচ্ছেন- শেষ সময়ে এ নিয়ে দলটিতে গুঞ্জন-আলোচনা এখন চরমে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে এমন খবর দলটির সর্বত্র। এর মধ্যে শুক্রবার কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে দলে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য পরিবর্তনের খবর নিয়ে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে কে আসছেন- এ নিয়ে কানাঘুষা, আলোচনা, মূল্যায়ন কোন কিছুরই কমতি ছিল না সারাদেশ থেকে আগত সাড়ে সাত সহস্রাধিক কাউন্সিলরদের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্য খুলবে- ওবায়দুল কাদেরই দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্নির্বাচিত হচ্ছেন, নাকি অন্য কেউ তা আজই নির্ধারিত হবে। তবে এবারের নতুন কমিটিতে তারুণ্যের চমক থাকছে বলে জানা গেছে।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরই আবার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন- এমন গুঞ্জন ডালপালা মেললেও এ নিয়ে ধূম্রজাল কাটেনি। তবে এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শুক্রবার দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতাই বলেছেন, সম্মেলনে নতুন কী চমক থাকবে সে বিষয়টি দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ জানেন না। তবে সাধারণ সম্পাদক পদের দৌড়ে এবং সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের মন্তব্য, আলোচনা শুনে আভাস পাওয়া গেছে, ওবায়দুল কাদেরই সেক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। তবে ড. আবদুর রাজ্জাকসহ অন্যদের নাম নিয়েও আলোচনার কমতি নেই।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মাঠে নির্মিত বিশাল প্যান্ডেলে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অর্থাৎ কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে আগত জেলার নেতাদের বক্তব্য শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যাহ্ন বিরতির পর শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এ অধিবেশনেই সারাদেশের সকল কাউন্সিলর তাদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন নেতা নির্বাচন করবেন। আজকের সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর অংশ নেবেন।
সম্মেলনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রবীণ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে চেয়ারম্যান করে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান খান। ভোটের জন্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ব্যালট পেপারও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গেছে, দ্বিতীয় অধিবেশন কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। ভোটের বদলে সমঝোতার মাধ্যমেই প্রধান দুটি পদে নির্বাচন করা হয়। কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব গঠনে সার্বিক প্রস্তুতি থাকলেও ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের কোন সম্ভাবনাই নেই।
রেওয়াজ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগেই বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি সভাপতির আসন ছেড়ে কাউন্সিলরদের জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসবেন। এরপর নির্বাচন কমিশন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন। প্রথমে দলটির দু’জন প্রবীণ নেতা সভাপতি পদে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করবেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হবে সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক কোন প্রার্থী না থাকলে প্রস্তাবিত দু’জনকেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মূল মঞ্চে উঠে পরবর্তী কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এরপর বাকি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব কাউন্সিলররা সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপরই অর্পণ করবেন। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গঠনের চাবিকাঠি দলের প্রধানের হাতেই থাকছে। অনুমাননির্ভর নানাজনের নাম আসলেও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, প্রবীণ-নবীনের সংমিশ্রণে নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। তবে গতবারের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মন্ত্রিসভার মতো এবারও বড় চমক আনতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অতীতের মতো ধাপে ধাপে নয়, আজকের দ্বিতীয় অধিবেশনেই দলের অধিকাংশ পদে মনোনীত নেতাদের নাম ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে এখন ঘুম হারাম অবস্থা বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের। অনেকেই ভুগছেন পদ হারানোর আতঙ্কে। আবার অনেকে রয়েছেন পদোন্নতির আশায়। দলের সভাপতিম-লীতে কিছু নতুন মুখ আসতে পারে এবং সম্পাদকমন্ডলী ও সদস্যপদে বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা আছে বলে দলের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে। তবে দলটির সূত্রগুলো বলছেন, নবীন ও প্রবীণের সম্মিলনে আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সংগঠনকে গতিশীল করতে কমিটিতে তারুণ্যের নতুন রক্ত সঞ্চালন করা হবে।
তবে গত রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দলের ভেতরে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। বিশেষ করে, সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন, তা নিয়েই সবার আগ্রহ ছিল বেশি। তবে দলের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক নেতারাই জানিয়েছেন, কে কোন পদ পাবেন- এটা পুরোপুরিই দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। কাউন্সিলররা কী ধরনের নেতৃত্ব চান, কাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখতে চান তা জেনেই নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সবারই এক কথা সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ কল্পনাও করছেন না।
সাধারণ সম্পাদকের পর সভাপতিমন্ডলীর পদের বিষয়ে আগ্রহ বেশি জ্যেষ্ঠ নেতাদের। মধ্যম সারির নেতাদের মূল লক্ষ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের পদের দিকে। সম্পাদকম-লী ও সদস্যপদে সাবেক ছাত্রনেতারা বেশ দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতাই বাদ পড়ার আশঙ্কায় ছুটে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন নেতাদের কাছে। পদ রক্ষায় দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টাও উল্লেখ করার মতো।
দলের একাধিক সূত্র আভাষ দিয়েছেন, আজকের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অধিকাংশ পদই ঘোষণা করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও দলের দলীয় মনোনয়নে দলের সংসদীয় বোর্ডও ঘোষণা করা হবে আজকের কাউন্সিলে। তবে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ গঠন করতে কিছু সময় লেগে যেতে পারে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।