আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল শুক্রবার

33

কাজিরবাজার ডেস্ক :
১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত মূলমঞ্চ প্রায় প্রস্তুত। মূল মঞ্চটি এমনভাবে সাজানো হচ্ছে যেন পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল নৌকা। সেই নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রমত্ত পদ্মার বিশাল জলরাশি। থাকছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুও। এছাড়া পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবন। থাকছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতিও। নৌকার পেছনে থাকছে জাতীয় চারনেতাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন সময় অবদান রাখা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ফেস্টুন ও উন্নয়নের চিত্রও।
আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে এমনি বর্ণাঢ্য ও মনোমুগ্ধকর করে সাজানো হয়েছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একদিন পরই আগামী শুক্রবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিল ঘিরে প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পথে ক্ষমতাসীন দলের। আর এই কাউন্সিলের মধ্য দিয়েই আসছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের নতুন নেতৃত্ব। আজ বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকেই কাউন্সিল প্রস্তুতির খুঁটিনাটি পর্যালোচনা শেষে সবকিছু চূড়ান্ত করা হবে। এবারের কাউন্সিলে মূল শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’
এবারের ২১তম কাউন্সিলেও সভাপতি পদে শেখ হাসিনা আবারও পুনর্র্নিবাচিত হবেন, এ প্রশ্নে দলের কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক একাট্টা, অনড়। তবে দলমত নির্বিশেষে সবার কৌতূহল- কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? ওবায়দুল কাদেরই থাকছেন, নাকি নতুন কেউ? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে শনিবার দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশন পর্যন্ত। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কে আসছেন, কেই-বা ছিটকে পড়বেন- সবকিছুই নির্ভর করছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর। কারণ অতীতের মতো এবারও সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা নতুন নেতৃত্ব গঠনের ভার বঙ্গবন্ধু কন্যার ওপরই অর্পণ করবেন, এটি প্রায় নিশ্চিত।
আওয়ামী লীগের অতীত সম্মেলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক পুনর্র্নিবাচিত হওয়ার সম্ভাবনার পাল্লা ভারি ওবায়দুল কাদেরের দিকেই। অতীত কাউন্সিল ঘেঁটে দেখা গেছে সবাই প্রয়াত আবদুল জলিল ছাড়া বাকি সবাই দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পাঁচবার। প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ছিলেন দুই মেয়াদে। এসব বিচারে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন বলেই গুঞ্জন রয়েছে।
অতীতের মতো এবারও প্রকাশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য কোন পদে কেউ প্রার্থিতা হিসেবে ঘোষণা করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই সবার ভাগ্য ছেড়ে দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকসহ আরও দু’তিন জনের নাম আলোচনা চলছে। তবে পুরো বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্ভর করছে সবকিছু। তবে দলটির সব মহলের ধারণা, সহযোগী-ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের মতো কেন্দ্রীয় কাউন্সিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় ধরনের চমক আনতে পারেন। এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে একঝাঁক সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেতে পারেন এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। দলের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, সাংগঠনিক রিপোর্ট ও শোকপত্রের খড়সা প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে, ৪১ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ, ১৮০ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি এবং ১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ও ১১ সদস্য বিশিষ্ট সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। আজকের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এসব কমিটির অনুমোদন হতে পারে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, স্থানীয় সরকার/পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ মনোনয়ন বোর্ড এবং সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড গঠনের কাজও প্রায় শেষ। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এসব কমিটি গঠন করছেন। আগামী ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশনে তা প্রকাশ করবেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। দ্বিতীয় দিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে দলের কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এদিন ৮১ সদস্য বিশিষ্ট আওয়ামী লীগের কমিটির ২৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। ২৫ অক্টোবর ঘোষণা করা হয় ২২ সম্পাদকম-লীর নাম। ৪টি পদ বাদ রেখে কমিটির অন্যান্য পদে নাম ঘোষণা করা হয় ২৯ অক্টোবর। সে সময় ধাপে ধাপে কমিটি গঠন করা হলেও এবার এক সঙ্গে পুর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। তবে এবার দ্বিতীয় কাউন্সিলে অধিকাংশ পদই একসঙ্গে ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথিদের দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়া, মঞ্চ ও সম্মেলনস্থল প্রস্তুতি এবং সাজসজ্জাসহ অন্যান্য কাজ প্রায় শেষের দিকে। সম্মেলনে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসসহ ৫০ হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন। তবে এবার আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বিদেশী অতিথিদের। এদিকে সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সম্মেলনকে সামনে রেখে দলীয় সভাপতির ধানম-ির কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সমাগম বেড়েই চলেছে। মুখরিত ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও। প্রায় প্রতিদিনই সেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কোন না কোন উপকমিটির বৈঠক।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এলাকাজুড়ে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ৬টি নৌকা। কোনটি কালো রঙে আচ্ছাদিত হয়েছে। আবার কোনটি হার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরির কাজ চলছে। উদ্যানের গাছে গাছে লাগানো জ্বলছে মরিচবাতি। কেউ কেউ মাইক লাগানোয় ব্যস্ত। শ্রমিকরা তালে তালে হাতুরি পিটিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের বিলবোর্ড ও ফেস্টুন। নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে রয়েছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোক। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় লাগানো হচ্ছে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র সংবলিত ফেস্টুন।
জানা গেছে, সম্মেলনস্থলে নেতা-কর্মীদের প্রবেশে জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট গেট থাকবে ৫টি। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ খালি থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতা-কর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এ ছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে চেয়ার দেয়া হবে ১৫ হাজার। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।
সম্মেলনে বিদেশী কোন অতিথি দাওয়াত দেয়া হচ্ছে না। তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবীসহ অন্যান্য পেশার বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে অথিতিদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। ৫ হাজার বাংলা কার্ড ও ১ হাজার ইংরেজী কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে গেছে। এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ মুখে যেমন বিমানবন্দর, বাস ও রেল স্টেশনসহ অন্যান্য স্থানে বিলবোর্ড ও ব্যানারের মাধ্যমে আমন্ত্রিত অতিথি ও কাউন্সিলরদের স্বাগত জানানো হবে জানিয়েছিলেন অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যরা।