শেখ রাসেল কুঁড়িতেই ঝরে পড়া এক গোলাপ

65

মো. আব্দুল মালিক :

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নং সড়কের ৬৭৭ নং বাড়িতে। এ বৎসর ১৮ অক্টোবরকে ‘রাসেল দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসেল দিবস উপলক্ষে শেখ রাসেলকে নিয়ে এক প্রস্থ আলোচনা।
শেখ রাসেলের জন্ম সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন-‘১৯৬৪ সালের অক্টোবরে রাসেলের জন্ম। তখনও বাড়ির দোতলা হয়নি। নীচ তলাটা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব কোণে আমার ঘরেই রাসেলের জন্ম হয়। মনে আছে আমাদের সে কি উত্তেজনা! আমি, কামাল, জামাল, খোকা কাকা অপেক্ষা করে আছি। বড় ফুফু, মেঝো ফুফু তখন আমাদের বাসায়। আব্বা তখন ব্যস্ত নির্বাচনী প্রচার কাজে। আইয়ুবের বিরুদ্ধে ফাতেমা জিন্নাহকে প্রার্থী করা হয়েছে সর্বদলীয়ভাবে। বাসায় আমাদের একা ফেলে মা হাসপাতালে যেতে রাজি হন নি। তাছাড়া এখনকার মতো এতো ক্লিনিকের ব্যবস্থা তখন ছিল না। এসব ক্ষেত্রে ঘরে থাকার রেওয়াজ ছিল। ……………….।”
জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার জন্মের সময় বঙ্গবন্ধু কলিকাতায় পাকিস্তান আন্দোলনে ব্যস্ত। কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মের সময় তিনি আইয়ুব শাহীর পতনের লক্ষ্যে চট্টগ্রামে নির্বাচনী প্রচারনায়। এই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবন।
নামকরণ- শান্তির দূত, দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের ভক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর কনিষ্ঠপুত্র যেন বার্ট্রান্ড রাসেলের মতোই দার্শনিক ও শান্তির দূত হয় । শেখ হাসিনা বলেনÑ‘আমাদের পাঁচ ভাই-বোনের সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট্ট বাচ্চা আমাদের বাসায় ঘর আলো করে এসেছে। আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আব্বা বার্ট্রান্ড রাসেলের খুব ভক্ত ছিলেন, রাসেলের বই পড়ে মাকে বাংলায় ব্যাখ্যা করে শোনাতেন। মা রাসেলের ফিলোসফি শুনে শুনে এত ভক্ত হয়ে যান যে, নিজের সন্তানের নাম রাখেন রাসেল।’
ছোট্টবেলা থেকেই রাসেল ছিল বাবা ভক্ত। এতটাই বাবা ভক্ত ছিল যে, বঙ্গবন্ধু যখন জেলখানায় থাকতেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে আর আসতে চাইতো না। কান্নাকাটি জুড়ে দিত। তখন ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, জেলখানাটা হচ্ছে আব্বার বাসা এখানে ও কেবল বেড়াতে আসতে পারে, থাকতে নয়। ও তখন বলত আমি আব্বুর বাসায় থাকব। এ প্রসঙ্গে শেখ রেহানা বলেনÑ‘যেদিন সবাই মিলে মায়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে আব্বাকে দেখতে যেতাম সেদিন রাসেল ফেরার সময় খুব কাঁদত। একবার খুব মন ভার করে ঘরে ফিরল। জিজ্ঞেস করতেই বলল, আব্বা আসল না। বলল, ওটা তার বাসা এটা আমার বাসা। এখানে পরে আসবে। কখনো রাতের বেলা মা, হাসু আপা, কামাল ভাই, জামাল ভাই সবাইকে ডেকে নিয়ে খুব কাঁদত। আমরা প্রথমে বুঝতাম না। মা বলতেন, বোধ হয় পেট ব্যথা করছে। পরে বুঝতাম আব্বার জন্য ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। রাসেলের জন্মের পর দীর্ঘ সময় আব্বার জেলে কেটেছে। আব্বাকে দীর্ঘ সময় দেখতে না পেয়ে রাসেল মন খারাপ করত। কাঁদত আব্বার কাছে যাবার জন্য।’
রাসেলের জন্মের পর ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা দেন। ৬ দফা প্রচারের অজুহাতে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে, তিনি কারাগারে যান, জামিনে বের হয়ে আসেন, আবার কারাগারে যান এভাবে করতে করতে আসল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। এই সময় তিনি দীর্ঘ দিন জেলে থাকায় ছোট রাসেল বাবাকে ভালো করে দেখার সুযোগ পায় নি, আদর পায় নি, তাই রাসেল বাবার জন্য কাঁদত।
রাসেলের পড়াশুনা নিয়ে শেখ রেহানা বলেনÑ‘রাসেলের স্কুলে যাওয়া শুরু চার বছর বয়সে। ও ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হয়। প্রথম প্রথম ওর সঙ্গে আমাদের কাউকে যেতে হতো। হাসু আপা, কামাল ভাই, জামাল ভাই অথবা আমি ওকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। দাঁড়িয়ে থাকতাম বাইরে। ক্লাসে নাম ডাকার সময় রাসেল হাত তুলে ‘এই যে আমি’ বলত। চোখ রাখতো বাইরে আমরা আছি কি না দেখার জন্য। কিছুদিন পর আমরা আর যেতাম না। স্কুলে ওর অনেক ভালো বন্ধু জুটে যায়। প্রথম প্রথম স্কুলে যেতে চাইতো না সে। বলতÑআজ তো সোমবার স্কুলে যাব না। পরে স্কুলের প্রতি ওর আকর্ষণ বেড়ে গেল। স্কুলে যাবার জন্য নিজেই তৈরি হতো। আমাদের প্রতিবেশী ইমরান ও আদিল ছিল ওর বন্ধু। তাদের সাথে সে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলত। আমাদের বাসায় ছোটদের অনেক গল্পের বই ছিল। রাসেলকে পড়ে শোনাতে হতো। একই গল্প পরদিন শোনাতে বসলে দু’এক লাইন বাদ পড়ত। রাসেল ঠিকই ধরে ফেলত এবং বলত কালকের সেই লাইনটা আজ পড়লে না কেন ?’ রাসেল লেখা পড়া, গল্প শুনা, খেলাধূলার প্রতি কতটা মনোযোগি ছিল এখান থেকেই জানা যায়।
কেমন ছিল রাসেল? এ সম্পর্কে জানা যায় প্রিন্সিপাল রাজিয়া মতিন চৌধুরীর Ñ‘যে চিঠি ডাকে দেয়া যায় না’Ñ নামক প্রবন্ধ থেকে। তিনি লিখেছেন, ‘সে ছিল আমার কাছে অন্য ছাত্রদের মতোই একটি ছাত্র, বিশেষ করে নজরে পড়ার মতো কিছুই সে করত না। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে রাসেল স্কুলে আসত। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী ইউনিফরম পরে আসত। তাছাড়া বিরাট গাড়ি বা ফ্লাগ গাড়িতে সে আসত না। তাই স্কুলে যাওয়া-আসা তার সবার মতোই ছিল। সবাইকে তাক লাগিয়ে চলার অভ্যেস বোধহয় তাদের পরিবারে ছিল না বলেই আমার ধারণা।’
মৃত্যুর পর রাসেলের স্কুল একদিন স্বাভাবিকভাবেই খোলে। সেখানে ওর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাসেলের শিষ্টাচারের প্রশংসা করেন। সেই স্মৃতি তুলে ধরেছেন রাজিয়া মতিন চৌধুরী এভাবে- ‘কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা আমাকে বললেন-জানেন আপা, রাসেল যতদিন এ স্কুলে পড়েছেÑকোনোদিন সে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবাধ্য হয়নি। সবাইকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। শিক্ষকরা যে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র; এ শিক্ষা হয়তো সে তার বাড়িতেই পেয়েছিল। নানা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একজন শিক্ষক বললেন, ‘১৪ আগস্ট অর্থাৎ স্কুলের শেষদিন টিফিন পিরিয়ডে দেখি একটি পোটলা দু’হাতে বুকে চেপে ধরে ছোট রাসেল ক্যান্টিন থেকে আসছে। দু’হাত জোড়া তাই হাত না তুলেই সালাম জানাল শিক্ষককে। শিক্ষক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার হাতে ঐ পোটলাতে কী ?’ রাসেল উত্তর দিল, ‘স্যার, সিংগাড়া।’ শিক্ষক হেসে জিজ্ঞেস করলেন আবারÑ‘এত সিংগাড়া দিয়ে কী হবে?’ উত্তর দিল রাসেল লাজুক হাসি মুখেÑ‘বন্ধুদের নিয়ে খাব।’ এখান থেকে বন্ধু বৎসল, শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাসেলের পরিচয় পাওয়া যায়। সে যে রাষ্ট্রপতির ছেলে এমন অহংকার তার মধ্যে ছিল না।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে শেখ রাসেল তার পরিবারের সাথে ধানমন্ডির আঠারো নম্বর রোডের একটি বাসায় বন্দি জীবন যাপন করে। বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হলেও এর একদিন পর মুক্তি পায় শেখ রাসেল ও তার পরিবার। ভারতীয় মিত্রবাহিনীর মেজররা মুক্ত করলে শেখ রাসেল প্রথমেই গিয়ে তাদের সাথে হ্যান্ডশেক করে। এ প্রসঙ্গে শেখ রেহানা বলেন-‘একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর আমরা মুক্ত হলাম। পাকিস্তানি আর্মিদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে ভারতীয় মিত্রবাহিনী। মেজর তারা আমাদের মুক্ত করেন। রাসেল গিয়ে প্রথমে তার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে।’ সেই ছোট বয়সেও শেখ রাসেলের মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ কাজ করত।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ংকর রাতের বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর হামলা চালালে আব্বা স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। হানাদাররা ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরের পরপরই আমাদের বাসা আক্রমণ করে এবং গোলাগুলি শুরু করে। তখন একটি গুলি এসে ঘুমন্ত রাসেলের পায়ের কাছে পড়ে। আব্বা তখন রাসেলের পাশে বসে ওকে বোতলে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। বেশি বয়স পর্যন্ত ও বোতলে দুধ খেত। তাই ঘুমের মধ্যে দুধ খাচ্ছিল বলে আব্বা বোতলটা ধরে রাখেন। আর তখনই কিছু একটা এসে পড়ল, আব্বা হাতে তুলে দেখেন বুলেট। আব্বা রাসেলকে বিছানা থেকে নামিয়ে মেঝেতে নিয়ে আসেন। মা জামালকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে আসেন। সকলকে ড্রেসিংরুমে নিয়ে যান। মা রাসেলকে বাথরুমের ভিতর নিয়ে যান।’’ সে রাতে পাকিস্তানিরা রাসেলকে হত্যা করতে না পারলেও ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালিরা তাকে হত্যা করে।
২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। পরদিন আবার বাসায় আক্রমণ হলে বেগম মুজিব জামাল ও রাসেলকে নিয়ে পাশের বাসায় আশ্রয় নেন। কামাল আশ্রয় নেয় জাপানি কনস্যুলেটের বাসায়। এর পরেই কামাল চলে যায় মুক্তিযুদ্ধে। আর বেগম মুজিব বন্দি হন পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে। ধানমন্ডির আঠারো নম্বর সড়কে একটা একতলা বাসায় বন্দি থাকে রাসেল। রাসেলের বন্দিদশার বর্ণনা দেন শেখ হাসিনা-
‘আমাদেরকে ধানমন্ডির আঠারো নম্বর সড়কে (পুরাতন) একটা একতলা বাসায় বন্দি করে রাখে। ছোট্ট রাসেলও বন্দি জীবনযাপন করতে শুরু করে। ঠিকমতো খাবার দাবার নেই। কোনো খেলনা নেই, বইপত্র নেই, কী কষ্টের দিন যে ওর জন্য শুরু হলো! বন্দিখানায় আব্বার কোনো খবরই আমরা পাই না। কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কিছুই জানি না। প্রথম দিকে রাসেল কান্নাকাটি করত। তার উপর আদরের কামাল ভাইকে পাচ্ছে না। সেটাও ওর জন্য কষ্টকর। মনের কষ্ট কীভাবে চেপে রাখবে আর কীভাবেই বা ব্যক্ত করবে। ওর চোখের কোণে সব সময় পানি।… আমরা বন্দিখানায় সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতাম। কারণ পাকিস্তানি বাহিনী মাঝে মাঝেই ঘরে এসে সার্চ করত। আমাদের নানা কথা বলত। জামালকে বলত, তোমাকে ধরে নিয়ে শিক্ষা দেব। রেহানাকে নিয়ে খুব চিন্তা হতো। ‘জয়’ এর মাঝে আমার কোল জুড়ে আসে। জয়ের জন্মের পরই জামাল ৫ আগষ্ট ১৯৭১ সালে বন্দিখানা থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে যায়। জামাল চলে যাবার পর রাসেলের মন আরো খারাপ থাকত।’
রাসেলের বন্দিজীবন সম্পর্কে শেখ রেহানা জানান-‘রাসেল সেই বন্দিজীবন পছন্দ করত না। সে বাসার বাইরে গিয়ে খেলতে চাইত। তার প্রিয় সাইকেল এনে দেবার জন্য জেদ করত। মা তাকে অনেক কষ্টে সামলাতেন। পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহার এতটাই খারাপ ছিল যে, মনে হতো যে কোন সময় আমাদের মেরে ফেলতে পারে। কামাল ভাই, জামাল ভাই যুদ্ধে চলে গেছেন। আব্বারও কোনো খবর নেই। রাসেল একাকী বসে কাঁদত। কাউকে কিছু বলতে পারত না। মনের মধ্যে কষ্ট চেপে রাখত, প্রকাশ করতে চাইত না। চোখে পানি কেন জানতে চাইলে বলত, ধুলো লেগেছে।’ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও রাসেল বন্দিখানা থেকে মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। মুক্তি পেয়ে সে নিজের বাড়িতে উঠতে পারেনি। কেননা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীরা লুটপাট ও দরজা জানালা ভেঙে ফেলেছিল। তাই বাড়িটি পুরোপুরি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত ভাড়া বাসায় থাকতে হয় রাসেলকে। যুদ্ধ শেষে বড় ভাই শেষ কামাল, মেজো ভাই শেখ জামাল ফিরে এলে রাসেলের মনটা খুশিতে নেচে ওঠে। কিন্তু বাবাকে সে খুঁজতে থাকে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা হতে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে এলে দাদা শেখ লুৎফর রহমানের সাথে রাসেল বাবাকে এয়ারপোর্টে আনতে যায়। বাবাকে পেয়ে রাসেল খুশি হয়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে শেখ রেহানা বলেনÑ‘আব্বা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসার পর রাসেল সব সময় তার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকত।’
রাসেল বেড়াতে খুব পছন্দ করত, নাকি আব্বাকে কাছ ছাড়া করতে চাইত না বলেই বেড়াতে যাবার বায়না ধরত! শেখ হাসিনা এ সম্পর্কে জানানÑ‘রাসেল আব্বাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করত। আব্বাকে মোটেই ছাড়তে চাইত না। যেখানে যেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব আব্বা ওকে নিয়ে যেতেন।… জাপান থেকে আব্বার রাষ্ট্রীয় সফরের দাওয়াত আসে। জাপানিরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দিয়েছিল। শরণার্থীদের সাহায্য করতে জাপানের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা দেয় আমাদের দেশের শিশুদের জন্য। সেই জাপানের আমন্ত্রণ। গোটা পরিবারকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিশেষভাবে রাসেলের কথা তারা উল্লেখ করে। রাসেল ও রেহানা আব্বার সাথে জাপান যায়। রাসেলের জন্য বিশেষ কর্মসূচিও রাখে জাপান সরকার।’
শেখ রেহানা জানান-‘আব্বার সঙ্গে আমার ও রাসেলের জাপান, মস্কো ও লন্ডন বেড়াবার সুযোগ হয়। রাষ্ট্রীয় সফর বলেই রাসেল বিদেশিদের সাথে খুব সৌজন্যমূলক ব্যবহার করত।… লন্ডনে বিখ্যাত মাদাম তুশোর মিউজিয়ামে আমরা যখন বেড়াতে যাই রাসেলের বিস্ময় আর কাটে না। আমরা দু’জন আব্বার সাথে নাটোরের উত্তরা গণভবনেও গিয়েছি। রাসেল সেখানে মাছ ধরত। আমরা বাগানে ঘুরে বেড়াতাম। ঢাকার গণভবনেও রাসেল মাছদের খাবার খাওয়াত।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এটাই তাঁর প্রথম আগমন। শেখ রাসেল সেই সময় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ রাজিয়া মতিন চৌধুরী বলেন-
‘‘১৪ আগষ্টের কথা বলছি। স্কুলে খবর এলো বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আসবেন বিভিন্ন বিভাগ ইত্যাদি পরিদর্শন করতে। সে উপলক্ষে কলা ভবনে প্রবেশ পথে কিছু ফুল ছিটিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ৫/৬ জন ছোট্ট ছাত্র। আমি ছ’জন ছাত্র একই উচ্চতা ও স্মার্ট দেখে বাছাই করলাম। রাসেল ও ছিল তাতে। সেই বাছাই করা ছয়টি ছেলেকে আমার অফিসে ডাকলাম। সবাই এসে লাইন করে দাঁড়াল। বললাম, জান তো আগামীকাল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বিশ^বিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর আসবেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। তিনি তোমাদের স্কুলের সামনে দিয়ে যাবেন। তোমরা ক’জন বিশ^বিদ্যালয়ে তাঁকে ফুল ছড়িয়ে স্বাগতম জানাবে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ইউনিফরম পরে সকালে স্কুলে আসবে। ফুলের মালা বা কুঁড়ি আমি আনব আরো আনব অনেক ফুল আর গোলাপ ফুলের পাপড়ি। মনে মনে ভাবলাম, ফুল শ্রেষ্ঠ উপহার যা দেবতার অর্ঘ্য হয়ে শোভা পায়, যে ফুল প্রিয়জনকে ভালোবেসে দেয়া যায়।
ছ’টি ছেলে আমার কামরা থেকে চলে যাবার পর মনে পড়ল এদের মধ্যে একমাত্র রাসেলই ঢুকবার সময় ও চলে যাবার সময় বলেছিল, ‘আস্সালামু আলাইকুম।’ আমি বলেছিলাম, ওয়ালাইকুম সালাম। অর্থাৎ আগামীকাল আসবে বলে যে রাসেল প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলÑসে আর আসেনি। কোনদিন আর আসবে না। তার জীবনে আগামী দিনের সূর্যোদয়ও হয়নি। কালো রাতÑগহীন আঁধারে তার কণ্ঠ নীরব হলো। সাক্ষী রইল তার রক্ত। আর নীরব সাক্ষী হয়ে থাকবে তাদের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটি।’’
রাজিয়া মতিন চৌধুরী ১৪ আগষ্ট রাতের বিষয়ে জানান- ‘সেদিন রাত সাড়ে দশটায় আমার স্বামী তৎকালীন উপাচার্য বোস প্রফেসর ড. আবদুল মতিন চৌধুরী শ্রদ্ধাবনত চিত্তে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলেন। জানালেন পনেরোই আগস্টের প্লান-প্রোগ্রামের কথা। বঙ্গবন্ধুর বৈশিষ্ট্য ছিল হাসিমুখে আর খোলা হৃদয়ে আলোচনা করা। সবশেষে হেসে বললেন, ‘রাসেল রাতে শুতে যাবার আগে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল-আব্বু, তুমি তাহলে সেই মানুষ, যার কথা এতবার করে প্রিন্সিপাল আপা বললেন। বেশ মজা হচ্ছে বন্ধুদের নিয়ে তোমাকে ফুলের পাপড়ি ছড়াবো।’ সে সুযোগ আর পায়নি শেখ রাসেল
১৪ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর বাড়ির তিনতলায় শেখ কামাল ও তাঁর স্ত্রী, দোতলায় শেখ জামাল ও তাঁর স্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে (দোতলায়) বাবা-মার সাথে শিশুপুত্র শেখ রাসেল ঘুমিয়ে ছিলো। বেডরুমের সামনে মেঝেতে কাজের ছেলে আব্দুর রহমান ওরফে সেলিম ঘুমিয়ে ছিলো। এছাড়া রেহানার রুমে ঘুমিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের। নিচতলায় রিসিপশনিস্ট মুহিতুল ইসলামসহ অন্য কর্মচারীরা। ভোররাতে (আনুমানিক ৪.৩০ টা থেকে ৫.০০ টা) হঠাৎ কিসের শব্দে বঙ্গবন্ধুর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙার পর শুনতে পান গুলির শব্দ। … এ সময় ফোন বেজে ওঠে। সেরনিয়াবাতের কণ্ঠÑ‘আমার বাড়ি আক্রান্ত। শেখ মণির বাড়িতে কিছু একটা অঘটন হয়েছে মনে হচ্ছে।’ সেরনিয়াবাতের বাসভবন আক্রমণের খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে টেলিফোনে (ইন্টারকম) ব্যক্তিগত সহকারী মুহিতুল ইসলামকে সেরনিয়াবাতের বাসভবন আক্রমণের খবর জানিয়ে বলেন, ‘জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে টেলিফোন লাগাও।’ মুহিতুলকে ফোন করার আগে বঙ্গবন্ধু রক্ষীবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে ফোন করেন, কিন্তু সেখানে কোনো অফিসারকে না পেয়ে ফোন করেন তাঁর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলক। তাঁকে বলেন, ‘জামিল তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোক আমার বাসায় আক্রমণ করছে। সফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।’ জামিল ফোন পেয়েই বললেন, ‘স্যার, আমি এক্ষুণি আসছি, চিন্তা করবেন না, ভয় পাবেন না, আপনি আপনার ঘরে থাকুন।’…
এরপর বঙ্গবন্ধু ফোন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সফিউল্লাহকে। তাঁকে বলেন, ‘সফিউল্লাহ, আমার বাসা তোমার ফোর্স এ্যাটাক করেছে। কামালকে হয়তো মেরেই ফেলেছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফোর্স পাঠাও।’ ফোন পেয়ে সফিউল্লাহ বলেন, ‘স্যার, আপনি কি কোনো রকমে একবার বাড়ির বাইরে আসতে পারবেন ? আমি কিছু একটা করছি। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। মুহিতুল বঙ্গবন্ধুকে জানান, পুলিশ কন্ট্রোল রুম টেলিফোন ধরছে না, তবে গণভবন এক্সচেঞ্জের লাইন পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু তখন টেলিফোনের রিসিভার ধরে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ এটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গে এক ঝাঁক গুলি নিচতলার অফিস কক্ষের দেয়ালে লাগে এবং বাড়ির দক্ষিণে লেকের দিক থেকে গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু সে সময় টেবিলের আড়ালে বসে পড়েন।’
‘প্রায় মিনিট বিশেক গোলাগুলির পর দু’জন মেজর কিছু সংখ্যক সশস্ত্র সৈন্যসহ বঙ্গবন্ধুর বাসার ভেতর প্রবেশ করে। তখন সেখানে কর্তব্যরত একজন কর্মকর্তা ও দু’জন পুলিশের সদস্য তাদের বাধা দিলে তারা ঐ তিন ব্যক্তিকে গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত করে। স্টেনগানের ব্রাশফায়ারের আওয়াজ, আহত পুলিশের আর্তচিৎকার শুনে শেখ কামাল নিচের অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে পৌঁছা মাত্রই তারা তাঁকেও ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।’ রিসিপশন কক্ষের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন শেখ কামাল। এ সময় রিসিপশনিস্ট মুহিতুল ইসলাম ও ডিএসপি নূরুল ইসলামকে ধরে নিয়ে গিয়ে গেটের কাছে লাইন করে দাঁড় করায়। সেখানে ঘাতকরা পুলিশের লোক ও টেলিফোন মিস্ত্রি আব্দুল মতিনকে আগে থেকেই দাঁড় করিয়ে রেখেছিল মেজর বজলুল হুদা। সে সময় এস বি পুলিশের এস আই সিদ্দিকুর রহমানকে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
অপরদিকে মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ গুলি করতে করতে দোতলায় ওঠে এবং বঙ্গবন্ধুকে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশের ও সেনাবাহিনীর আইন-শৃঙ্খলা ও সংবিধান লঙ্ঘন করে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির বাসায় গোলাগুলি করে আক্রমণ করতে পারে আমি তার রাষ্ট্রপতি থাকতে চাই না। তবে তোমাদের মতো অধঃস্তন কর্মকর্তাদের নিকট আমি পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারি না। অতএব সেনাবাহিনীর চীফ ও ডেপুটি চিফদের এখানে নিয়ে এলে আমি তাঁদের নিকট আমার ইস্তফা প্রদান করবো। এরপর দুইজন মেজর তাঁকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রে নিয়ে বেতারে তাঁর পদত্যাগ ঘোষণা করার জন্য বলে। বঙ্গবন্ধু এতে রাজি হলে তাঁকে ঘেরাও করে সিঁড়ির কাছে নিয়ে আসা হয়। ‘সিঁড়ির ২/৩ ধাপ নিচে নামতেই মেজর নূর কিছু একটা বলতেই মেজর মহিউদ্দিন ও তার ফোর্স এক সাইডে সরে যায়। তখন মেজর নূর ও মেজর বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে।’
অন্যসূত্র মতে-‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মেজর মহিউদ্দিন সিঁড়ির কাছে এলে ঘাতক হাবিলদার মোসলেমউদ্দিন গুলি করে। বুলেটে ক্ষতবিক্ষত বঙ্গবন্ধুর দেহ তক্ষুণি সিঁড়ির ওপর লুটিয়ে পড়ে। এরপর হাবিলদার মোসলেমউদ্দিন ও অন্যরা বঙ্গমাতাকে ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকলকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে। এরই এক ফাঁকে রাসেল দৌড়ে নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ির কাজের লোকজনের কাছে আশ্রয় নেয়। আব্দুর রহমান রমা তখন তার হাত ধরে রেখেছিল। একটু পরে এক সৈন্য রাসেলকে রমার কাছ থেকে নিয়ে বাড়ির গেটের কাছে সেন্ট্রিবক্সে লুকিয়ে রাখে।’ একজন মেজর সেখানে রাসেলকে দেখতে পেয়ে তাকে দোতলায় নিয়ে আসে। এ সময় রাসেল ডুকরে কেঁদে ওঠে ও অনুরোধ জানায় তাকে না মারার জন্য। বলে, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দিন।’ উপরে নিয়ে যাবার সময় নিচে লাইনে দাঁড়ানো মুহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে রাসেল বলে, ‘আমাকে মারবে না তো!’ মুহিতুল ইসলাম তাঁকে সান্ত্বনা দেন। বলেন, ‘না, তোমাকে মারবে না।’ এরপর রাসেলকে তারা দোতলায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
এই ভয়ংকর রাতের বর্ণনা দিয়ে বেবী মওদুদ লিখেছেন-‘ মা রমাকে বললেন, ‘তুই রাসেলকে নিয়ে পেছনের সিঁড়ি দিয়ে পাশের বাসায় যা। আমি না ডাকা পর্যন্ত আসবি না। হাতের কাছে নতুন কেনা স্কুলের আকাশি রঙের শার্টটা তার গায়ে পরিয়ে দিল মা।… রমা রাসেলকে নিয়ে দ্রুত পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামল। কিন্তু বাড়ির পেছনেও অস্ত্র হাতে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে। রাসেলকে ধমক দিয়ে থামাল একজন। তারপর তাদের বাড়ির সামনের গেটে সেন্ট্রিবক্সের কাছে দাঁড় করিয়ে রাখল। সেখানে মুহিতুল ভাইকে দেখে রাসেল তাকে জড়িয়ে ধরে থাকল।… কিছুক্ষণ পর আরো কয়েকটা গুলির শব্দ শোনা যায়। রাসেল এবার ফুঁপে ফুঁপে কাঁদতে থাকে। রমা তাকে সামলাতে পারে না। লাফাতে লাফাতে গেটের কাছে কয়েকজন সৈন্য দৌড়ে আসে। হাসতে হাসতে বলে, সব শেষ। আমরা করেছি। গেটে দাঁড়িয়ে থাকা সৈন্যরাও উল্লাস করে। তারা সবাইকে গাড়িতে উঠতে বলে। রাসেলদের ধরে নিয়ে আসা সৈন্যটা হঠাৎ বলে ওঠে, ‘স্যার ছেলেটাকে কী করব ? আর একজন জোরে বলে ওঠে, ওকে এখানে নিয়ে আস। রাসেল কাঁদতে কাঁদতে রমাকে জড়িয়ে ধরে তাদের সামনে এসে দাঁড়াল। একজন রমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। রাসেল কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি মায়ের কাছে যাব। আমি মায়ের কাছে যাব।’ ওর কথা শুনে হো হো করে হাসল ওরা। একজন এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে বলল, ‘চল, তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাই।’
এরপর রাসেল কামাল ভাইয়ের লাশ দেখে, সিঁড়িতে বাবার রক্তাক্ত লাশ ফেলে, জামাল ভাইয়ের ঘরে দরজায় আবদুলের লাশ দেখে ঘরে ঢুকতেই দেখে মেঝেতে পড়ে আছে জামাল ভাই, খুকী ভাবী, রোজী ভাবী আর মা। কী হয়েছিল রাসেলের বুকের ভেতর ? মনের ভেতর ?
রাসেল কাঁদছিল। কাঁদতে কাঁদতে সে অনুরোধ করে, ‘আমাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমাকে মারবেন না।’ সৈন্যটি শুনল না। মাথায় গুলি চালিয়ে দিল ছোট্ট রাসেলের। রাসেল নিষ্পাপ যে ফুল ভালোবাসত, যে কুকুর ভালোবাসত, যে পিঁপড়ে ভালোবাসত, পুকুরের মাছ ভালোবাসত, পাখি ভালোবাসতÑসে ভালোবাসা পেল না! করুণাও নয়! রাসেলকে হত্যা করা হয়েছিল সবার শেষে। বাবা-ভাইয়ের লাশ দেখিয়ে মৃত মায়ের পাশে এনে একটি দশ বছরের শিশুকে হত্যা করার পর সেই হত্যাকাণ্ডকে তারা বলে, ‘গবৎপু গঁৎফবৎং’ দয়া করে হত্যা! বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছুটে আসা কর্নেল জামিল কিছুই করতে পারেন নি। তিনি গেটের কাছে আসার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। অফিস কক্ষের অ্যাটাচ্ড বাথরুমে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসেরকে আর সব শেষে শেখ রাসেলকে।
দশ বছরের একটি নাবালক শিশুকে এমন নৃশংস হত্যা বিশ^বাসি এখন পর্যন্ত দেখেনি, ভবিষ্যতে দেখবে কি না স্রষ্টাই জানেন। বেচেঁ থাকলে আজ শেখ রাসেলের ৫৭তম জন্ম দিন পালিত হতো। রাসেল দিবসে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।