কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দীদের পরিচর্যা ও তাদের সুচিকিৎসার স্বার্থে দেশের ৫৯ কারাগারে মাদকাসক্ত নিরাময় ইউনিট স্থাপন করেছে কারা অধিদফতর। মাদকাসক্ত বন্দীদের বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা প্রদান করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ও কারাভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে কারাগারকে প্রকৃত সংশোধনাগারে পরিণত করাই এর মূল লক্ষ্য বলে জানা গেছে। এসব ইউনিটে কোন বন্দী সুস্থ না হলে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে দেশের বিভিন্ন সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এছাড়া মাদকাসক্ত কারাবন্দীর সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে ৩ শ’ শয্যার কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতাল ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ হাসপাতালে শুধু মাদকাসক্ত বন্দীর চিকিৎসার জন্য ৫০ শয্যা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সারাদেশে আটক দৈনিক গড়ে প্রায় ৭৫ হাজার বন্দীর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি বন্দী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিজে মাদক গ্রহণ, বিতরণ বা বিক্রি ও সেবনের দায়ে এমনকি মাদক সরবরাহের জন্য অর্থ প্রদানকারী হিসেবে মাদক মামলার আসামি হিসেবে আটক রয়েছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ৫৯ কারাগারে ইউনিট স্থাপন করা হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৮ কারাগারেই এ রকম ইউনিট স্থাপন করা হবে। মাদকাসক্ত কারাবন্দীদের কারা কর্তৃপক্ষের সুচিকিৎসা প্রদানের অংশ হিসেবে মাদকাসক্ত নিরাময় ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।
কারাসূত্র জানায়, সরাসরি মাদকাসক্ত আসামি, মাদক পাচার ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত আসামি, মাদক মামলায় আটক বন্দীসহ কম ও অধিক পরিমাণ মাদকাসক্ত আসামিদের পৃথক করে চিকিৎসা প্রদান, মনোবিজ্ঞানী বা কনসালটেন্ট কর্তৃক পরামর্শ প্রদান ও মাদকবিরোধী গণসচেতনতামূলক মোটিভেশনের জন্য এসব ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। বন্দীকে মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে উদ্বুদ্ধ করা ও মাদকাসক্ত বন্দীকে অন্য যে কোন প্রকার বন্দী থেকে আলাদা করে কোন পদ্ধতিতে তাদের মাদকমুক্ত করা যায় তা ইউনিট থেকে কারাগারের ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্ট ও কারা কর্মকর্তা ঠিক করে ব্যবস্থা নেবেন। এসব কারাবন্দীর নিয়মিত পরিচর্যা ও কোন প্রকার উন্নতি হয়েছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবে কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। একইসঙ্গে মাদকাসক্তদের বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য কারা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
কারাসূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর কারাগারে সর্বোচ্চ সংখ্যক মাদকাসক্ত বন্দী আটক রয়েছেন। এর বাইরে রাজধানীসহ সকল কেন্দ্রীয় কারাগরে মাদক মামলার আসামি বেশি আটক রয়েছেন। তবে জেলা কারাগারগুলোতে এ সংক্রান্ত আসামির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। সেজন্য অধিকসংখ্যক মাদকাসক্ত বন্দী যেসব কারাগারে আটক রয়েছেন অগ্রাধিকার হিসেবে সেসব কারাগারে স্থাপন করা ইউনিটের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে প্রথমে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে উদ্যোগ নিয়েছে কারা অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে কারা অধিদফতরে উদ্যোগে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও জার্মানীভিত্তিক বেসরকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জিআইজেড কর্তৃক কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দী সংশ্লিষ্ট অফিসারদের প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।