কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আর যেন কোন সুদখোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদী, অগ্নিসন্ত্রাসী, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকারী ও এতিমের টাকা আত্মসাতকারী ক্ষমতায় আসতে না পারেÑ সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও পুত্র তারেক রহমানসহ পুরো পরিবারই খুনী পরিবার। আর খালেদা জিয়া হচ্ছেন সন্ত্রাসের ‘গডমাদার’। যিনি ঠা-া মাথায় হরতাল-অবরোধের নামে শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন। এর থেকে বড় সন্ত্রাস আর কী হতে পারে? তার (খালেদা জিয়া) মতো বড় সন্ত্রাসী আর কে হতে পারে?
আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাত করে আদালতের রায়ে খালেদা জিয়া কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে তিনি রাজার হালেই রয়েছেন। পৃথিবীর কোন ইতিহাসে নেই যে, আদালত কর্তৃক কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামির সেবা করার জন্য একজন মেইড সার্ভেন্ট দেয়া হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার জন্য একজন মেইড সার্ভেন্ট রয়েছে, তার সেবার জন্য। সেও কারাভোগ করছে। আমরা তা দিয়েছি। কারণ আমাদের কোন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নেই। এতে আমরা বিশ্বাসও করি না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নতুন নয়, অনেক পুরনো। ক্ষমতায় থাকতে ১৯৯১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খালেদা জিয়ার ’নি রিপ্লেস’ (হাঁটু প্রতিস্থাপন) করা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় থাকতে সৌদি আরবেও তার দেহে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই সময় তিনি ওমরা হজ ও মার্কেট করতে হুইল চেয়ারে চলতেন। আর ওই হুইল চেয়ার ফালু (মোসাদ্দেক আলী ফালু) ঠেলে নিয়ে যেতেন, তা সবাই দেখেছে। হুইল চেয়ারে বসা সেটাও তো নতুন কিছু নয়। এটা তো যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি।
বুধবার তার সরকারী বাসভবন গণভবনে প্রায় তিন বছর পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় কমিটির বৈঠকে সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ঠা-া মাথায় হরতাল-অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করিয়েছেন। সেই অবরোধ-হরতাল এখনও তোলেননি। তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে, কত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তিনি (খালেদা জিয়া) তো জেলে আছেন, বেশ ভাল আছেন। কিন্তু তার জন্য কারও কারও মায়াকান্নাও দেখি। কিন্তু তার জন্য মায়াকান্নার আগে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর দিকে একবার সবার তাকিয়ে দেখা উচিত। বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, নাশকতা, প্রায় ৫শ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কথা মানুষ এত তাড়াতাড়ি ভুলে যায় কীভাবে?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় কমিটির এই সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সভাপতিম-লীর সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রতিবছর জাতীয় কমিটির সভা করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রায় তিন বছর পর এই সভাটি অনুষ্ঠিত হলো। সভায় আওয়ামী লীগের আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন ছাড়াও আসন্ন কেন্দ্রীয় ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য বাজেটেরও অনুমোদন নেয়া হয়।
সবশেষ ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে? নির্বাচনের আগে বিএনপি আন্তর্জাতিক সব জরিপ ও দেশের জনগণের মনের কথা আগেই বুঝতে পেরেছে যে, নির্বাচনে তাদের জয়ের কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ দেশের জনগণ তাদের দুঃশাসন ও মানুষ হত্যার কথা ভোলেনি। তাই বিএনপি জেতার জন্য নির্বাচন করেনি, নির্বাচনকে অর্থ বানানোর বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল। তারা একেকটি আসনে ৩/৪ জন করে মনোনয়ন দিয়েছিল। কখনও লন্ডনে থাকা একজনকে খুশি করে, আবার পল্টনে থাকা নেতাদের খুশি করে কেউ মনোনয়ন পেয়েছেন, আবার কেউ অনেক বেশি অর্থ দিলেই তা পরিবর্তন করা হয়েছে। যে যত বেশি অর্থ দিতে পেরেছে সে মনোনয়ন পেয়েছে। একেক আসনে একাধিক প্রার্থী দিয়েছে। কারণ তারা জানেই যে জিততে পারবে না। তাই এই নির্বাচন নিয়ে তাদের মুখে কোন কথা মানায় না।
বিএনপি-জামায়াত জোট কখনই গণতন্ত্র ও জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় টানা প্রায় তিন বছর ধরে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও ভয়াল নাশকতার কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা আসেনি। যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, নাশকতা চালায় জনগণ তাদের ভোট দেবে কেন? এটা বুঝতে পেরেই তারা নির্বাচনে না এসে গণতন্ত্রকে নস্যাত করতে চেয়েছিল। কারণ তারা জনগণের শক্তি, সমর্থন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। কারণ এই দলটির (বিএনপি) জন্ম জনগণের মধ্যে থেকে হয়নি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচারের উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলটির জন্ম। তারা জানত নির্বাচনে গেলে তারা জিতবে না, সেজন্যই জনগণকে তারা পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
খালেদা জিয়াও হত্যার রাজনীতিকে বৈধতা দিয়েছিল দাবি করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর ইনডেমনিটি দিয়ে আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে খালেদা জিয়া অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে আওয়ামী লীগসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করিয়ে ইনডেমনিটি দিয়ে সেসব হত্যাকা-ের বিচারের পথ বন্ধ করে হত্যার রাজনীতিকে বৈধতা দিয়েছিলেন। হত্যা-খুন-দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলাসৃষ্টি, হাওয়া ভবনের নামে দ্বৈত সরকার সৃষ্টি করে দুর্নীতির আখড়া বানানোÑ এসবই ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নীতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর পর আমরা দেখেছি সেই সময়ও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যা স্বাধীনতার স্বপক্ষের ঘটনা নয়। যার ফল এই দাঁড়ায় যে, সারাদেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা যারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, যেহেতু জাতির পিতা স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, এই বিচারের কার্যক্রমও চলেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে সেটা স্বাধীনতাবিরোধী এবং দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারী যারাই হোক না কেন তারা তা মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে বাংলাদেশ যখন সুষ্ঠুভাবে চলতে শুরু করেছে তখনই এলো ১৫ আগস্টের চরম আঘাত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ে যে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন, সেটা খুনী রশিদ ও ফারুকের বক্তব্যেই প্রমাণিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। ১৯৯৬-২০০১ এই পাঁচ বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের স্বর্ণযুগ। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম। স্বাক্ষরতার হার, বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, আমরা প্রতিটি সেক্টরকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এতে আমাদের অর্থনীতির চাকাও সচল হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য ,২০০১ সালে গভীর চক্রান্তের কারণে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমাদের আসতে দেয়া হয়নি, সেটা একটা গভীর চক্রান্ত ছিল।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পরে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছিলেন। ঠিক একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর কায়দায় সারাদেশে নির্যাতন শুরু হয়। এই নির্যাতনের শিকার শুধু আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তা না, একদিনে ১৩ সচিবের চাকরি নেই। শত শত সেনা অফিসার, সিভিল প্রশাসককে চাকরিচ্যুত করা হলো। আর যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি, তাদের ওএসডি করা হয়েছিল। যতদিন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিল তারা ওএসডি ছিলা। এভাবে তারা অত্যাচারের স্টিম রোলার চালাতে থাকে।
গত নির্বাচনের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান আরও বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন, যে নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা বলতে চায় বিএনপি। এটা তারা ভুলে যায় যে ওই নির্বাচনে একেকটা সিটের পেছনে তারা দুই-তিনজনকে মনোনয়ন দিয়েছিল। যে যখন যার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে তাকেই মনোনয়ন দিচ্ছে। একভাগ দিতে হচ্ছে লন্ডনে, আর দুইভাগ দিতে হচ্ছে বাংলাদেশে। গুলশানের অফিসকেও সন্তুষ্ট করতে হয়েছে, পুরানো পল্টনের অফিসকেও। যে টাকা দিতে পারছে না সে মনোনয়ন পাচ্ছে না। একজন মনোনয়ন জমার দেয়ার দুই/তিন ঘণ্টা পরে আরেকজন জমা দেয়। একটা সিটের জন্য দুই/ তিনজনকে যারা মনোনয়ন দেয়, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে জেতার জন্য নয়; মনে হয় এটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল তারা। আসলে আন্তর্জাতিকভাবে যে সার্ভেটা (জরিপ) হয়েছিল তাতে সবাই দেখতে পেয়েছিল যে বিএনপি সিট পাবে না। সেই জন্য নির্বাচনটাকে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য হিসেবে নিয়ে নেয়। সেখানে সিট না পেয়ে অন্যদের দোষারোপ দেয়ার কোন মানে হয় না।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটা কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তবে এই সন্ত্রাসের গডমাদারই হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি এখন জেলখানা থেকে হাসপাতালে। তারজন্য আবার মেইড সার্ভেন্ট দেয়া হয়েছে। মানুষ এমনিতে কাজের বুয়া পায় না। আর খালেদা জিয়ার জন্য স্বেচ্ছায় একজন কারাবরণ করছে, তার সেবা করার জন্য। এত সুবিধাও তাকে দেয়া হয়েছে। আর এসব মামলা তো আমরা দেয়নি। তাদের কাছে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারই দিয়েছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা দিয়েছে, কিন্তু কিছুই খুঁজে পাননি। কিন্তু আমরা কোন মামলা দেইনি, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির কথা তো আন্তর্জাতিকভাবেই বেরিয়ে এসেছে। তার ছেলের দুর্নীতির কথা এফবিআই বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও মামলা রয়েছে, কিন্তু তিনি আদালতে যান না। কারণ দুর্নীতির সব তথ্য তো রয়েছেই, আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। আর একুশে আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলাও খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান মিলে করেছে। আর খালেদা জিয়া অগ্নিসন্ত্রাস ও পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা দেশের মানুষ ভুলে যাবে কীভাবে?
বাংলাদেশ উন্নয়নে সারাবিশ্বের সামনে বিস্ময় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়, দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়। এটাকে অনেকেই কিছু বলতে পারে। কিন্তু আমার প্রশ্ন- তারা (বিএনপি) অনেক কিছু করলে দারিদ্র্যের হার কমেনি কেন? প্রবৃদ্ধির হার বাড়েনি কেন? আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়নি কেন। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশের উন্নতি হয়েছে। আজকে আমরা ৮ দশমিক ১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। খালেদা জিয়ার রেখে যাওয়া ৪১ ভাগ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আমরা ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, এই হার আমরা আরও নামিয়ে আনব।
টেলিভিশন খাতকে বেসরকারী খাতে উন্মুক্ত করে দেয়ায় মানুষ কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে এত টেলিভিশন চ্যানেল, সেটা কে দিয়েছে? বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করা, সেটা কে করেছে? এগুলো আমাদের সরকার করেছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় তো করেননি। আমি যখনই প্রধানমন্ত্রী হয়েছি, তখনই বেসরকারী টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এখানে বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর টকশোতে গিয়ে টক-মিষ্টি কথা বলার কথা মানুষ পাচ্ছে। টক টক কথা তো বলেই যাচ্ছে। এই দৃশ্য তো সবাই দেখছে। এত কথা বলতে সুযোগ দেয়ার পরও অনেকে বলেন, আমাদের কথা বলার অধিকার নেই! বলেই যাচ্ছে, তারপরও পরচর্চা করবে। আসলেই এই ধরনের পরচর্চা এক ধরনের অভ্যাস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। জাতির পিতার আদর্শ ও নীতি নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করে যাচ্ছি। কারণ আওয়ামী লীগ সব সময়ই জনগণের কল্যাণে ও দেশের উন্নয়নে কাজ করে। বিএনপির আমলে বাংলাদেশ যে দুর্নীতি, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী, অর্থ পাচারকারীর দেশ হিসেবে পরিচয় পেয়েছিল, আমরা সেই পরিচয় পাল্টে দিয়েছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নের বিস্ময় বলে এখন আন্তর্জাতিকভাবেও সবাই স্বীকৃতি দিচ্ছে।
আগুনে পুড়িয়ে মারা অগ্নিসন্ত্রাসীরা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে অনেক পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে যাব, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। ২১০০ সাল পর্যন্ত এক শ’ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার ডেল্টা প্ল্যান আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী জাতি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বে চলতে পারি, সেটা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এই অর্জনটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। ঘুষখোর, সুদখোর, এতিমের অর্থ চুরি করা, মানিলন্ডারিং, গ্রেনেড হামলাকারী, বোমা হামলাকারী, আগুনে পুড়িয়ে মারা অগ্নিসন্ত্রাসী; এরা যেন এদেশে আর কোনদিন ক্ষমতায় না আসতে পারে, দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে না পারেÑজাতির কাছে সেটাই আমার আহ্বান।