কাজিরবাজার ডেস্ক :
অন্যান্য মামলার পাশাপাশি সারাদেশের নিম্ন আদালতগুলোয় প্রায় দুই লাখ মাদকের মামলা ঝুলছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায়ই সাড়ে ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। আইনজীবীরা মনে করছেন, মামলার চার্জশীট প্রদানে বিলম্ব, সাক্ষীর অনুপস্থিতি, বিচারক সঙ্কট, সরকারী কৌঁসুলিদের ব্যক্তিগত মামলার প্রতি ঝোঁক ইত্যাদি নানা কারণে ঝুঁলে আছে মাদক মামলার বিচার কাজ। মামলা নিষ্পত্তিতে ধীরগতির ফলে একদিকে যেমন মামলার জট সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে জামিন না পাওয়ায় কারাগারগুলোয় বন্দীদের ভিড় বেড়েই চলেছে। আবার মাদক মামলার আসামিরা জামিন নিয়ে বেরিয়ে পুরান ব্যবসায়ই নিজেকে আবার যুক্ত করছে। ফলে মাদক নির্মূলের সরকারের মূল উদ্দেশ্যই বিফলে যাচ্ছে। এ ছাড়া মামলার অন্য সাক্ষীরাও সাক্ষ্য দিতে প্রায় ক্ষেত্রেই উদাসীন থাকেন। ফলে মামলায় দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়, হচ্ছে।
এতদিন মাদক মামলায় বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়ায় বিচারকাজ বন্ধ ছিল। হাইকোর্টের আদেশের ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি অবশ্য কমেছে। শুরু হয়েছে বিচারকাজ। হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল না হওয়া পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মাদকের মামলা চলবে। মাদকবিরোধী অভিযানের ফলে দিন দিন মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। চালানো হচ্ছে সাঁড়াশি অভিযান। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। মাদক মামলায় যারা গ্রেফতার হয়েছে বা যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এমন অনেক মাদক কারবারি বন্দুকযুদ্ধে মারাও গেছে।
’১৮ সালের ডিসেম্বরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯০ সংশোধনের পর ট্রাইব্যুনাল গঠন না করায় এক বছর ধরে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। বিচারপ্রার্থীরা বিচার পাচ্ছিল না ওই মুহূর্তে হাইকোর্ট এক আদেশে বলে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ’১৮-এর ৪৪(১) ধারা অনুসারে ট্রাইব্যুনাল না হওয়া পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মাদকের মামলা চলবে। হাইকোর্টের আদেশের ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে গেছে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, মাদক মামলার বিচারে ট্রাইব্যুনাল হয়নি। আদালত এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে আইনমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করি। আইনমন্ত্রী জানান, শীঘ্রই পদক্ষেপ নেয়া হবে। আদালত বলেছে, মাদক আইনের ৪৪(১) ধারা অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল না হওয়া পর্যন্ত ফৌজাদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা অনুযায়ী অন্যান্য আইনের বিচারের বিধান অনুযায়ী হবে। ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল এ বিষয়ে বলেন, মামলার চার্জশীট দিতে বিলম্ব, সাক্ষীর অনুপস্থিতি, বিচারক সঙ্কট, সরকারী কৌঁসুলিদের ব্যক্তিগত মামলার প্রতি ঝোঁক বেশি ইত্যাদি জানা কারণে ঝুলে আছে মাদক মামলার বিচারকাজ। ট্রাইব্যুনাল না থাকায় এতদিন বিচার বন্ধ ছিল। হাইকোর্টের আদেশের ফলে বিচারপ্রার্থীদের সেই ভোগান্তি অনেকাংশে দূর হয়েছে। এদিকে হাইকোর্টের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশের আদালতে বিচারাধীন ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ২৪২ মামলা। এর মধ্যে ৫ বছরের বেশি সময় বিচারাধীন রয়েছে ৩১ হাজার ১৫৩ মামলা। জুনের পর গত দুই মাসে সারাদেশে আরও কয়েক হাজার মাদক মামলা দায়ের হয়েছে। বিচার না চলায় ক্রমেই বাড়ছে এ মাদক মামলার স্তূপ। সবচেয়ে বেশি মাদক মামলা রয়েছে ঢাকা জেলায়। এ জেলায় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৫৬।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের উদ্দেশপূরণকল্পে সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে পারবে। (৪) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, এ ধারার অধীন ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোন অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে তাহার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব প্রদান করতে পারবে। গত ৮ জুলাই হাইকোর্ট মাদক মামলার এক আসামির জামিনের শুনানিকালে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন ও গেজেট জারি না করার বিষয়টি লক্ষ্য করে। সে দিনই আদালত এ বিষয়ে আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে। এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন এবং গেজেট প্রকাশ না করায় ২৫ আগস্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে গেজেট প্রকাশের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেয়। আদালত বলে, গেজেট না হওয়া দুঃখজনক, দুর্ভাগ্যজনক।
ওই দিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পি সাংবাদিকদের বলেন, এখনও গেজেট হয়নি। গেজেট না হওয়ায় মার্চের পর থেকে বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। এ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। একটা খসড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে আমাদের এখনও কিছু জানানো হয়নি। জানালে আমরা আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করব। জুনের পর গত দুই মাসে সারাদেশে আরও কয়েক হাজার মাদক মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া বিচার না চলায় ক্রমেই বাড়ছে মাদক মামলার স্তূপ।