কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাসের ধাক্কা সারা বিশ্বের আদালতে লেগেছে। তা বাংলাদেশের উচ্চসহ নিম্ন আদালতগুলোতেও পড়েছে। বাংলাদেশ ভারত আর পাকিস্তানে প্রায় এক কোটি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া সারা বিশ্বে কোটি কোটি মামলা বিচারের জন্য রয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করেন যাতে এই সঙ্কট কেটে যায়। মানুষই যদি না বাঁচে তা হলে কিসের কি? কিসের আপনার কোর্ট কাচারি। আমরা অনেক খারাপ কাজ করেছি আগে ভাগেই মাফ চেয়ে নেয়া উচিত। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, পরিস্থিতি কিছুটা ইমপ্রুভ করে তা হলে রেগুলার কোর্ট না হয়ে ভার্চুয়াল কোর্ট হবে।
এদিকে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে করোনা ভাইরাসের কারণে আদালত না চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি আপীল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত এসেছে। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ আলী আকবরের সই করা একটি নোটিসে এ বিষয়ে বলা হয়, দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলা এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সব আদালতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নোটিশে আরো বলা হয়েছে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি আপীল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বর্ণিত বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করেছেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয় যে, স্বল্প পরিসরেও আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে আদালত প্রাঙ্গণে বিচারক, আইনজীবী, আদালতের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবী সহকারীসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও তদবিরকারকদের উপস্থিতি আবশ্যক। করোনাভাইরাস রোগ এর সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্কটময় সময়ে আদালত প্রাঙ্গণে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয় বিবেচনায় স্বল্প পরিসরেও আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা করা সমীচীন হবে না।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হক বলেছেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বই বন্ধ। ইমার্জেন্সি সার্ভিস ছাড়া সবই বন্ধ। সারা পৃথিবীতে কত মামলা বিচারাধীন এই মুহূর্তে বলতে পারব না। আদালত খুললে তখন বলতে পারব। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন যাতে করোনা থেকে নিস্তার পেতে পারি। এছাড়া আর বলার কিছু নেই। নিজেরা ঘরে থাকেন সুস্থ থাকেন। যাতে এই ক্রাইসিস কেটে যায়। মানুষ যেন আবার সুস্থ হয়। মানুষই যদি না বাঁচে তাতে কিসের কি? কিসের আপনার কোর্ট কাচারি। যে কোন সময় যে কেউ হতে পারে। উচিত প্রার্থনা করা, যা করছি করছি পরে যেন বেশি শাস্তি দিও না।
অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, সারা বিশ্বে কয়েক কোটি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। করোনার কারণে বিচার চলছে না। সমস্ত আদালত বন্ধ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারত আর পাকিস্তান মিলিয়ে আদালতে প্রায় এক কোটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া সারা বিশ্বে প্রায় কয়েক কোটি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। পুরো পৃথিবীই লকডাউন হয়ে গেছে। কোথায়ও কোন আদালত চলছে না। ভারতে দু’একটা পিএল হচ্ছে। রেগুলার আদালত নয়। কোন নতুন মামলা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কারো করার কিছু নেই। পরিস্থিতি সবারই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। নতুন কোন মামলা বাড়ছে না। আদালত খোলার পরে পরিস্থিতি যদি কিছু ইমপ্রুফ করে ত হলে রেগুলার আদালত না হয়ে ভার্চুয়াল আদালত হতে পারে। আশা করি কিছুটা উন্নত হলে হবে।
এর আগে হাইকোর্টেও একটি বেঞ্চ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপন করে। সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর সম্প্রতি বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেন। এগুলো হলো- এক. স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমানবন্দরে যখন বিদেশীরা বাংলাদেশে আগমন করছেন, তখন অভ্যন্তরে প্রবেশের পূর্বে তাদের কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কি না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা জানাতে বলেছেন। দুই. সারাদেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালগুলো এখন পর্যন্ত প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়নি। আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি সব বেসরকারী হাসপাতালও করোনাভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) গ্রহণ করতে হবে। তিন. প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরগুলোতে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে সেখানে সরঞ্জামগুলো পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা, যদি না থাকে জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন।