প্রসূতি মৃত্যু হার কমাতে কোয়েল

17

নারী বিশেষ করে প্রান্তিক এলাকায় বসবাসকারী গর্ভবতী নারী ও প্রসূতিদের জন্য অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে কাজ করছে ‘কোয়েল’। কার্বণমনোক্সাইড এক্সপোজার লিমিটার বা ‘কোয়েল’ হলো এক ধরনের পরিধানযোগ্য স্মার্ট চুড়ি, যা গ্রামীণ জনপদে অন্তঃসত্ত্বা নারীর কাছে প্রতি সপ্তাহে একদিন পৌঁছে দেয় গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্ক বার্তা। বিশেষ করে যে সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাক্তার বা প্রশিক্ষিত নার্স নেই, কমিউনিটি ক্লিনিকও দূরবর্তী, সে সব অঞ্চলে গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রায় চিকিৎসকের ভূমিকায় রেকর্ডকৃত ৮০টি বার্তা নিয়ে কাজ করে থাকে ‘কোয়েল’। ইউএসএআইডির অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ‘নবযাত্রা’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট কর্মীরা অন্তঃসত্ত্বা নারীর হাতে পরিয়ে দেন ‘কোয়েল’, যা সহজে নষ্ট হয় না, ভেজে না পানিতে। এটি গর্ভবতী নারীদের খুবই ভাল বন্ধু, উপকারী ও কার্যকর একটি ডিভাইস, সুস্বাস্থ্যের ভরসা ও প্রতীক সর্বোপরি নিরাপদ প্রসবের নিশ্চয়তা। বিশেষ করে যাদের মোবাইল নেই তাদের জন্য। আর যে সব নারীর মোবাইল আছে, তারা সতর্ক বার্তা পান ‘মামা’ মেসেজের মাধ্যমে। এর পাশাপাশি কিছু অর্থ নগদ সহায়তা হিসেবে পান প্রতি মাসে এবং প্রসব পরবর্তী ১৫ মাস পর্যন্ত, যা প্রসূতি ও সন্তানের লালন পালনে হয় প্রভূত সহায়ক। গ্রামীণ জনপদে এ পর্যন্ত সাড়ে ২৩ হাজার নারীকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে ‘কোয়েল’। এ জাতীয় প্রকল্প দেশব্যাপী আরও সম্প্রসারিত করা বাঞ্ছনীয়।
‘বাংলাদেশের নারীর স্বাস্থ্য প্রজনন অধিকার সুরক্ষা’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে পরিবেশিত তথ্যে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১৬ জন নারী মারা যান সন্তান প্রসব করতে গিয়ে। এই হিসেবে প্রতি বছর ৫ থেকে ৭ হাজার নারীর মৃত্যু ঘটে, যাকে বলে প্রসূতি মৃত্যু। বাংলাদেশ বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে অনেকটা অগ্রসর হলেও অনেকাংশে পিছিয়ে আছে এদিক থেকে। যা হতে পারে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়নে প্রতিবন্ধক। সমাজে প্রচলিত নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার ও অজ্ঞানতা, ক্ষুধা ও অপুষ্টি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অপ্রাপ্তি সর্বোপরি সন্তান প্রসবে অপর্যাপ্ত সুযোগ ও অকারণে সিজার প্রধানত প্রসূতি নারী ও শিশুর অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তদুপরি দেশে সরকারীভাবে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ও খুব কম, জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ মাত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাজেট বরাদ্দে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজি অর্জন করতে হলে এ সবই দূর করতে হবে পর্যায়ক্রমে। সে অবস্থায় সহায়ক হতে পারে প্রসূতিবান্ধব ‘কোয়েল’।