প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতে ফিফার সভাপতি ॥ বাংলাদেশ আজ বিশ্ব ফুটবলের রাজধানী

37
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে বিশ্ব ফুটবল সংস্থার (ফিফা) প্রেসিডেন্ট জিরান্নি ইনফান্তিনো সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ফিফা প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের লাল সবুজের জার্সি উপহার দেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
‘বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে আমরা আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’ বৃহস্পতিবার ঢাকায় একদিনের সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা সফরে এসে কথাগুলো বলেছেন জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল ডি ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের (ফিফা) সভাপতি তিনি। ব্রাজিলের জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ (১৯৮০) ও সুইজারল্যান্ডের সেপ ব্লাটারের (২০০৬ ও ২০১২) পর তৃতীয় ফিফা সভাপতি হিসেবে সুইজারল্যান্ড এবং ইতালির দ্বৈত নাগরিক ইনফান্তিনো বাংলাদেশ সফরে এলেন।
বৃহস্পতিবার ভোরে মঙ্গোলিয়া থেকে বিমানযোগে ফিফা সভাপতি ঢাকায় আসেন। প্রথমেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন সকাল সাড়ে দশটায়। এরপর বেলা সোয়া ১২টায় তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভবন পরিদর্শনের পাশাপাশি সেখানে বাফুফে কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি সভায় মিলিত হন। এরপর দুপুর সাড়ে ৩টায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রীড়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এরপরই বিমানবন্দরের উদ্দেশে হোটেল ছাড়েন তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা।
ফিফা সভাপতির সফরের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত। ঘণ্টাকাল সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাম্প্রতিক সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে ইনফান্তিনো বলেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ফুটবলের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।
প্রেস সচিব জানান, ফিফা সভাপতি তার সংস্থা বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) ফিফা সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে এই আশ্বাস প্রদান করেন।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘কলকাতায় গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলাটি আলোচনায় উঠে আসে। ফিফা সভাপতি বলেন, ফুটবল থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। বিশেষ করে শৃঙ্খলার বিষয়টি। তিনি বাংলাদেশে ফুটবলের উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন। তিনি ফিফার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার জন্যও বাফুফেকে পরামর্শ দেন।’
প্রধানমন্ত্রী ফুটবলকে দেশের একটি জনপ্রিয় খেলা হিসেবে উল্লেখ করে তার দাদা এবং বাবাও ফুটবল খেলতেন বলে স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার ভাই শেখ কামাল বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় খেলাধূলার সংগঠন আবাহনী ক্রীড়া চক্রের প্রতিষ্ঠাতা।’ দেশের খেলাধুলার উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে ৪৯২টি মিনি স্টেডিয়াম স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশে নতুন খেলোয়াড় অন্বেষণে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছেলে এবং মেয়েদের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প এবং বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুব এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, বাফুফের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এবং সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইনফান্তিনো বলেন, ‘সবাইকে শুভ সকাল, বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। ফিফা প্রেসিডেন্ট হিসেবে বলতে হচ্ছে, বাংলাদেশ আজ বিশ্ব ফুটবলের রাজধানী। কারণ ফিফা প্রেসিডেন্ট এখানে। এখানে ফুটবল নিয়ে এবং খেলাটির উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে।’
বিকাল ৫টার পরে ঢাকা ছাড়েন ইনফান্তিনো, গন্তব্য লাওস। খুব বেশিক্ষণ না থাকলেও বাংলাদেশ থেকে ভাল স্মৃতি নিয়েই ফিরছেন তিনি, ‘আমি খুবই আশাবাদী যে ভাল স্মৃতি নিয়ে ফিরতে পারব এখান থেকে। আবহাওয়া দারুণ। অভ্যর্থনাও পেয়েছি চমৎকার। বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলের জন্য। এখানকার ফুটবলের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করতে পারি আমরা।’
ঢাকা ছাড়ার আগে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে মিলিত হন ফিফা সভাপতি। এখানে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশকে ফিফা যেমন ফুটবল উন্নয়নে সহায়তা করে, তেমনি বাংলাদেশকেও করে। বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নের জন্য ফিফার কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। শুধু পেশাদার লীগ নয়, বয়সভিত্তিক ফুটবলকেও প্রাধান্য দেয় ফিফা। ফিফার নীতি হচ্ছে সব দেশই যেন ভালভাবে ও বেশি পরিমাণে ফুটবলটা খেলতে পারে (মহিলা পর্যায়সহ) এবং সে দেশের সরকারও যেন ফুটবলের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। ফেডারেশনগুলোকেও এজন্য সক্রিয় হতে হবে। ধনী ব্যক্তিদের ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। এটাই ফিফা নিশ্চিত করতে চায়।’
বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি এটা মানতে রাজি নই, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট অনেক নিয়ম-কানুনের খেলা, ঘন ঘন নিয়ম বদলায়, সবাই তা বোঝেও না। ফুটবল অনেক সহজ নিয়মের খেলা। সবাই তা বোঝে। এই খেলা অনেক উত্তেজনাময়, হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। আসলে শুধু বাংলাদেশই নয়, ফুটবল পুরো বিশ্বেরই এক নম্বর খেলা।
বাংলাদেশের ফুটবল সম্পর্কে ধারণা? আমি জামাল ভুঁইয়াকে চিনি। তিনি ডেনমার্কে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী। দারুণ খেলোয়াড়। চিনি ঝাঁকড়া চুলের অধিকারী হামজাকে, যিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলেন। এরা বাংলাদেশের আগামী দিনের ফুটবলারদের জন্য আদর্শ।’ ইনফান্তিনোর অভিমত।