কাজিরবাজার ডেস্ক :
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা ভোটার হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ ও মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তি করে রোহিঙ্গারা ভোটার হতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একাজে তাদের সহযোগিতা করছে জাতীয় সনদধারী পুরনো রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে প্রশাসন সজাগ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপরাধে সরকার ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত করেছে নির্বাচন অফিসের ৩০ কর্মচারীকে।
সূত্র জানায়, আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের অপরাধের মূল উৎস মোবাইল ফোন। রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সরকার গত একমাস ধরে থ্রি জি ফোর জি বন্ধ রেখেছে। বাংলাদেশী সিমে নেটওয়ার্ক দুর্বল দেখে রোহিঙ্গারা তাদের দেশের সিম ব্যবহার করে ঠিকই অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আশ্রয় ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অবাধে স্বদেশী (মিয়ানমার) সিমকার্ড ব্যবহার করে অতীতের ন্যায় নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মিয়নমার সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফে ওপারের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এ কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সিম নির্ভর হয়ে পড়েছে। হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে রোহিঙ্গারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। একজন রোহিঙ্গাকে ভোটার করাতে ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ প্রদান করতে রাজি হচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, যেভাবেই হোক রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন জব্দ করতে হবে। সেনা বাহিনীকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর দায়িত্ব দিয়ে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ওপার থেকে দেশে ঢোকানোর সময় ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সিম এর একাধিক চালান ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। বৃহস্পতিবার কুতুপালং মার্কেটের সামনে থেকে মিয়ানমার থেকে আনা এমপিটি নামে মোবাইল অপারেটরের ২৩০টি সিমকার্ডসহ এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করেছে উখিয়া থানা পুলিশ। আটক রোহিঙ্গা যুবক মোঃ করিম আশ্রিত বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ক্যাম্প-১ এর আওতাধীন ব্লক-এ৩২ এর নুরুল আলমের পুত্র। এর আগে টেকনাফেও বিপুল সিমকার্ডসহ তিন রোহিঙ্গাকে আটক করেছিল পুলিশ।
জানা যায়, রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধ কর্মকান্ড রোধকল্পে সরকার বাংলাদেশী সিমকার্ডের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেয়ায় ৩২টি শিবিরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সিমকার্ড ব্যবহার করছে। সরকার বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের থ্রি জি ও ফোর জি ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক সীমিত রাখায় ওপারের সিমকার্ডে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে গোপন তথ্য পাচার করছে বহির্বিশ্বে। এক মাস ধরে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের দুর্বল নেটওয়ার্ক দিয়ে সক্রিয় থাকা দু’টি সন্ত্রাসী গ্রুপ কাক্সিক্ষত স্থানে মেসেজ পৌঁছাতে পারছে না। নিজেদের মধ্যে (রোহিঙ্গা জঙ্গী) যোগাযোগ করতে না পেরে মিয়ানমারের নেটওয়ার্ক নির্ভর হয়ে পড়েছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এতে রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা মোবাইল নেটওয়ার্ক ভোগান্তিতে পড়লেও আত্মীয়-স্বজন বা দালালদের মাধ্যমে ঠিকই মিয়ানমার থেকে সিমকার্ড এনে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। উখিয়া থানার ওসি জানান, ক্যাম্পে বিক্রি করতে আসা ২৩০টি মিয়ানমারের সিমসহ পুলিশ ওই রোহিঙ্গা যুবককে আটক করতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে উখিয়া থানায়।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারের সিমকার্ড ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা। আশ্রয় শিবিরে রাতে নৌকা মাঠে এখনও চলছে অস্ত্র চালানো ট্রেনিং। মধুরছড়া তথা কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, পুঠিবনিয়া, চাকমারকুল, নয়াপাড়া, মুচনী ক্যাম্পে অন্তত চার সহগ্রাধিক রোহিঙ্গা বিদ্রোহী জঙ্গীর আস্তানা তথা নিরাপদ বাসস্থলে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা অস্ত্র হাতে বিভিন্ন ব্লকে ঘুরাফেরা করে প্রত্যাবাসন না হওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে চলেছে। আরসা নামধারী সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা জঙ্গীরা শালবন ক্যাম্পে রাতে ঘনঘন বৈঠকে বসছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রভাবশালী রোহিঙ্গা যারা ইতোপূর্বে ভোটার তালিকাভূক্ত হয়ে জাতীয় সনদ হাতিয়ে নিয়েছে, মূলত তারাই তাদের স্বজনদের ভোটার করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সনদধারী পুরনো ওই রোহিঙ্গাদের আইনের আওতায় আনা ব্যতীত আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে মত প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞজনরা। উখিয়ায় হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গিয়ে তিন রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। উখিয়ার জালিয়াপালং সোনার পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তিন রোহিঙ্গাকে এক মাস করে জেল দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
উখিয়ার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ বেদারুল ইসলাম জানান, উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের তথ্য সংগৃহীত ও যাচাইকৃত স্থানীয় নাগরিকের ভোটার অন্তর্ভুক্তির দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এ সময় বিকেলে ছবি তুলতে আসা ডেইল পাড়ার আবদুল হামিদ (৩২), নুর হোসেন (২৮) ও মুর্শিদা আকতারকে (২৫) সন্দেহ হলে উখিয়া নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটররা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা রোহিঙ্গা বলে স্বীকার করেছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আটক রোহিঙ্গারা নিজেরা স্বীকারোক্তি দিয়েছে তারা মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা। তারা স্থানীয় জনৈক ব্যক্তিকে টাকার বিনিময়ে ভোটার হতে চেয়েছিল বলে জানায়। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের নামে ইস্যুকৃত জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।