কাজিরবাজার ডেস্ক :
রোহিঙ্গাদের এদেশে অবস্থান, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন, আশ্রয় ক্যাম্প থেকে যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়া, বাংলাদেশী এনআইডি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসের আগে আসা পুরনো রোহিঙ্গার অনেকে উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় ক্যাম্পে ঢুকতে শুরু করেছে। এদের অনেকের কাছে বাংলাদেশের জাতীয়তার সনদ, এনআইডিও রয়েছে। এদেরকে নিবন্ধিত করা হচ্ছে ইউএনএইচসিআর’র পক্ষ থেকে। ইতোপূর্বে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ রোহিঙ্গাকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সরকার নিবন্ধিত করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ইউএনএইচসিআর, আইএমওসহ বিভিন্ন বিদেশী এনজিও পুরনো রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য আশ্রয় শিবির নির্মাণ করে দিচ্ছে।
২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে রাখাইন রাজ্য থেকে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর সরকার পক্ষে উখিয়া-টেকনাফে তাদের আশ্রয়স্থল নির্মাণের জন্য ৬ হাজার ২শ’ একর ভূমি না দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছিল। ৩২টি আশ্রয় শিবির নির্মিত হওয়ার পর এখন বিভিন্ন বিদেশী এনজিও সংস্থা আরও ভূমি ব্যবহার করছে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর নির্মাণের জন্য, যা সরকারের সিদ্ধান্তবিরোধী।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ভোটার হতে সহায়তা বা সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, যত আগেই আসুক না কেন- মিয়ানমার থেকে এসে কোন রোহিঙ্গা এদেশের ভোটার হয়ে থাকলে সেটা বাতিল হবে। এই বিষয়ে কোন ছাড় নেই। রোহিঙ্গা ভোটার বিষয়ে সামনে আরও নির্দেশনা আসতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নানা উদ্যোগ ও কঠোর মনোভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পুরনো রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে ফিরে আসছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ক্যাম্পে ঢুকেছে। তবে যারা ইতোমধ্যে নানাস্থানে স্থায়ীভাবে বসতি গেঁড়েছে এদের কেউ এখনও ফেরেনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা নেতাদের পরিচালনাধীন কক্সবাজারে একাধিক মাদ্রাসা-এতিমখানার সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সরকারী দল সমর্থিত স্থানীয় নেতাদের। সূত্র মতে, ক্যাম্প পলাতক রোহিঙ্গাদের দেখভাল করার জন্য নগদ টাকাও প্রদান করা হয়ে থাকে সরকারী দল সমর্থক কিছু নেতাকে।
চট্টগ্রামের পটিয়া জমিদারখিল শিবাতলী স্কুল এলাকা থেকে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বুচিদং খানসামা এলাকার আমির হামজার পুত্র জাহেদ আলম জানান, প্রায় ১৬ বছর পূর্বে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে সপরিবারে পটিয়ায় ভাড়া বাসায় কাটিয়েছি। স্ত্রী ২ ছেলেমেয়েসহ পটিয়া থেকে ট্রানজিট ক্যাম্পে চলে এসেছি। আমাদের সঙ্গে পটিয়া থেকে আরও ২০ পরিবার ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেছে। ট্রানজিট ক্যাম্পে দায়িত্বরত ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি না হওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে ট্রানজিট ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছি জানতে পারলে আমার চাকরিটা যাবে। এখানে আশ্রয় নিয়ে এখন পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়েছে ৮০ পরিবার। বাকিরা এখনও তালিকাভুক্ত হয়নি। এসব রোহিঙ্গাকে উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কুুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ জানান, আগে ট্রানজিট ক্যাম্প দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের ছিল। কিন্তু এখন ইউএনএইচিসআর এবং আরআরআরসি কার্যালয় দেখাশোনা করে থাকে। তাই রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানান, সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ফেরাতে কাজ করছে। আমরা নিজেরাও এ নিয়ে কঠোরভাবে কাজ করে আসছি। তাই রোহিঙ্গাদের অনেকে নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পে ফিরছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পুরনো রোিহঙ্গাদের যারা এদেশের ভোটার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এদেরকে চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। একই সঙ্গে আগে আসা বা অন্যকোনভাবে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার তথ্য পেলে সেটা নির্বাচন অফিসে জমা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ মোখলেছুর রহমান।