কাজিরবাজার ডেস্ক :
গত ২৬ আগষ্ট একদিনে সৌদি আরব থেকে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরেছিলেন ১১১ জন নারী কর্মী। সংসদীয় কমিটির সুপারিশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এসব নারীদের দেশে ফেরার কারণ চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যৌন নির্যাতন, খেতে না দেওয়াসহ ১১ কারণে এসব নারী কর্মী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ৫ম বৈঠকে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছে মন্ত্রণালয়।
তবে, সময় কম থাকায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করে পরবর্তী বৈঠকের জন্য করেছে।
সৌদি আরব থেকে নারী কর্মী ফিরে আসার দুই দিন পর গত ২৮ আগষ্ট অনুষ্ঠিত কমিটির ৪র্থ বৈঠকে কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ প্রসঙ্গটি তোলেন। ওই বৈঠকে সৌদি আরব থেকে সর্বস্ব হারিয়ে নারী কর্মীদের ফেরত আসার বিষয়টি উল্লেখ করে এর কারণসহ বিস্তারিত বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপনের পরামর্শ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব থেকে এসব নারী কর্মীর ফিরে আসার কারণ চিহ্নিত করে পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী যেসব নারী কর্মী ফিরে এসেছেন, তারা হলেন-নিয়মিত বেতন না দেওয়ায় ৪৮ জন, পর্যাপ্ত খাবার না দেওয়ায় ২৩ জন, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে ৩৮ জন, ছুটি না দেওয়ায় ৪জন, একাধিক বাড়িতে কাজ করানোয় ৭ জন, অন্য কফিলের কাছে বিক্রি করে দেওয়ায় ১ জন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১০ জন, পারিবারিক কারণে ১ জন, ভিসার মেয়াদ না থাকায় ৮ জন, চুক্তি (দুই বছর) শেষ হওয়ায় ১৬ জন এবং অন্যান্য কারণে ২ জন। এরমধ্যে কারও কারও ক্ষেত্রে একাধিক কারণ রয়েছে।
এসব নারী কর্মী দেশের ৩৯টি জেলার অধিবাসী। এর মধ্যে ঢাকা জেলারই ছিলেন ১৭ জন। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলার ৯জন, ফরিদপুর জেলার ৮ জন, সুনামগঞ্জ জেলার ৭ জন। তিনটি জেলার ৫ জন করে, এক জেলার ১ জন, ৬টি জেলার ৩ জন করে, ৮টি জেলার ২ জন করে এবং ১৭টি জেলার ১ জন করে।
সৌদি ফেরত এসব নারী কর্মীর মধ্যে ২ বছরের কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়া ১৬ জন বাদে বাকিরা এক মাস থেকে ২ বছরের কম সময়ের মধ্যে ফেরত আসেন। এর বড় একটি অংশ আসেন এক থেকে ৬ মাসের মধ্যে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সময় না থাকায় আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। পরের বৈঠকের জন্য এটি স্থানান্তর করা হয়েছে।’
এদিকে সংসদীয় কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে বর্তমানে বিশ্বের ২৬টি দেশে বাংলাদেশ মিশনে ২৯টি শ্রম কল্যাণ উইং চালু আছে। এছাড়া, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান/শ্রমবাজার সম্প্রসারণের বিষয়ে জাপানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে প্রবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কর্মীদের কী পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া কমিটি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ নিয়ে যেসব কর্মী বিদেশে যান, তাদের ঋণ পরিশোধের হারসহ সার্বিক বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।
কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ, অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, মৃণাল কান্তি দাস, আয়েশা ফেরদাউস, পংকজ নাথ ও মো. সাদেক খান বৈঠকে অংশ নেন।