তৃণমূল সম্মেলন শেষ করতে মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

12

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সারাদেশে আওয়ামী লীগের ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কমিটিরই মেয়াদ নেই। পরবর্তী জাতীয় সম্মেলনের আগে দলটির হাতে সময় তিন মাসও নেই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব জেলা-মহানগরের সম্মেলন করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে জেলা-মহানগরের সম্মেলন করার বিষয়ে কোন দিনক্ষণ বেঁধে দেয়া হয়নি। এত স্বল্পসময়ের মধ্যে এতগুলো সম্মেলন আদৌ সম্ভব কী না, তা নিয়ে খোদ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে।
তবে মেয়াদোত্তীর্ণ মহানগর-জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন সম্মেলনগুলো যতটা সম্ভব সম্পন্ন করতে বেশ কয়েকটি পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলের সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা দফায় দফায় বৈঠকে বসে একটি খসড়া পরিকল্পনাও তৈরি করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরের মধ্যে ইউনিয়ন, ১৫ নবেম্বরের মধ্যে উপজেলা এবং বেধে দেয়া ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা ও মহানগরের সম্মেলন করতে চান দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অক্টোবরের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে যতগুলো সম্ভব তৃণমূল সম্মেলন সম্পন্ন করতে মাঠে নামছেন।
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সবশেষ অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও মহানগর কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষ করতে হবে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেলা সম্মেলন করার জন্য জেলা-মহানগরের নেতাদের নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের সম্মেলন করতে হবে।
এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় সম্মেলনের আগেই ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও মহানগরের সম্মেলন করতে হয়। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোরও সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় সম্মেলন করা হয়। এগুলো আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে তৃণমূলে নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে।
তারা জানান, জেলাগুলোর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণে স্ব স্ব বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কাজ করছেন। ইতোমধ্যেই বিচ্ছিন্নভাবে উপজেলা সম্মেলন চলছে। মূলত জেলা কমিটির তত্ত্বাবধানে উপজেলাগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন হয়। আর উপজেলা সম্মেলনে অতিথি কে থাকবেন তা নির্ধারণ করে দেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা ও মহানগরের নেতারা তাদের আওতায় থাকা ইউনিয়ন, উপজেলা সম্মেলনগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে দলটির কয়েকজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তৃণমূলের সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পুরো অক্টোবরজুড়ে সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন চলবে। ১ থেকে ১৫ নবেম্বরের মধ্যে উপজেলাগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এরপর ১৬ নবেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন শেষ করেই কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েক দফা নির্দেশনাও দিয়েছেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, অতীতে আওয়ামী লীগ যখনই বিপদে পড়েছে এ তৃণমূলই কিন্তু দলকে রক্ষা করেছে। সেই কারণে যত দ্বন্দ্ব, সংঘাত বা গ্রুপিং থাকুক না কেন সবকিছু মিটিয়ে ফেলে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগের আসন্ন জাতীয় সম্মেলন, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের আগেই তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার নির্দেশনা অনুযায়ীই কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফরে নামছেন।
২১তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সকল জেলা-মহানগর-উপজেলা-ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজাতে গঠিত কেন্দ্রীয় ৮টি টিম সারাদেশে সাংগঠনিক সফরে যাচ্ছেন। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তারা মাঠে থেকে তৃণমূলকে জাতীয় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করবেন এসব টিম।
সবশেষ কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সভায় তৃণমূলের সম্মেলনকে সামনে রেখে বেশ কয়েক দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২০ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। পরদিন ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল অধিবেশন চলবে। জেলা ও বিভাগগুলোতে বর্ধিত সভার মধ্যদিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হবে। এছাড়া সম্মেলন সামনে রেখে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রীর অনুমোদন পেলে এই কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ সকল ওয়ার্ড ইউনিয়নসহ জেলা-উপজেলার কমিটি গঠন করা হবে। আর এ লক্ষ্যে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দলের ৮টি টিম সারাদেশে সাংগঠনিক সফরে যাবেন। বিভিন্ন ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নিয়ে আমাদের যারা বিভাগীয় পর্যায়ে সমন্বয় করছেন, তারা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেসব ইউনিটে সম্মেলনের তারিখ ঠিক করবেন। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন শেষে সার্কুলার ইতোমধ্যে আমরা জেলায় পাঠিয়েছি।
তিন বছরে যা পারেননি, মাত্র তিন মাসে সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করা সম্ভব কি না জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিন বছরে অনেক কমিটি হয়েছে। এ সময়ে যেগুলোর কাউন্সিল অনেক আগে হয়েছিল, সেগুলোর কমিটি দিয়েছি। আমরা কুমিল্লা মহানগর কমিটি ২২ বছর পরে দিয়েছি, নারায়ণগঞ্জের কমিটি ১৭ বছর পর দিয়েছি। ময়মনসিংহের কমিটিও হয়েছে অনেকদিন পরে। আওয়ামী লীগ ইচ্ছে করলেই পারে। আমাদের টিম ওয়ার্ক আছে।
সূত্র জানায়, দলের গত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর বিভাগীয় যুগ্ম-সাধারণ এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা কয়েক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। প্রতিদিনই দলের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন প্রস্তুতির বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
সাধারণত কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ তৃণমূলে অর্থাৎ জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নের সম্মেলন করে থাকে। তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। কিন্তু এই তিন বছরে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র একটি জেলার সম্মেলন করতে পেরেছে।