কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পৃথক বিশেষ পুলিশ ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য আলাদা পুলিশ ইউনিট গঠন করতে হবে। সারাবিশ্বে মেট্রোরেলের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ইউনিট রয়েছে। তাই মেট্রোরেলের নিরাপত্তার জন্য বিশেষায়িত আলাদা পুলিশ ইউনিট গঠন করতে হবে। সোমবার গণভবনে মেট্রোরেলের প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মেট্রো রেলের জন্য আলাদা পুলিশ ইউনিট গঠনের কাজ এখন থেকেই শুরু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, সময বেশি নেই, এখনই এ নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। এ সময় সভায় উপস্থিত জাতীয় নিরাপত্তা সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে মেট্রো রেল পুলিশ ইউনিট গঠনের বিষয়টি দেখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও মেট্রোরেলের প্রতিটি বিষয় মনোযোগ সহকারে প্রত্যক্ষ করেন এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতেও তিনি প্রয়োজনীয় সমাধান ও নির্দেশনা দেন।
সভায় মেট্রোরেলের অগ্রগতি বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম এ এন সিদ্দিক। সভায় জানানো হয়, মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে এমআরটি (ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট) লাইন-৬ এর ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল বাণিজ্যিক অপারেশনে যাবে বলেও জানানো হয়। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এম এ এন সিদ্দিক ৬ লাইন এমআরটি’র পাশাপাশি ১, ২, ৩, ৪, ৫ লাইন এমআরটি’র অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।
দেশে এই প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)’র সহযোগিতায় রাষ্ট্র মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ডিএমটিসিএল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই মেগা প্রকল্পের দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু নির্দেশনা দেন। সভায় জানানো হয়, আগস্ট নাগাদ ৬ লাইন প্রকল্পটির (উত্তরা-আগারগাঁও-মতিঝিল) ৩০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সভায় আরও জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ৬ লাইনের এমআরটি’র উত্তরা আগারগাঁও অংশের প্রায় ৪৬ শতাংশ কাজ এবং আগারগাঁও-মতিঝিলের ২৪ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সভায় সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূঁইয়া, সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে বিভাগের সচিব ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সেলের সিইও ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বাংলাদেশে জাইকার প্রতিনিধি হিতোশি হিরাতা নেতৃত্বে জাইকার একটি প্রতিনিধিদলও এ সময় বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থার্ড ফেস থেকে শুরু হয়ে পল্লবীর মধ্য দিয়ে রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ এবং ফার্মগেট, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, তোপখানা রোড ও বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারী সূত্রে বলা হয়েছে, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এমআরটি-৬ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতে জাইকা ১৬ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা দিচ্ছে। প্রকল্পের বাকি টাকা বাংলাদেশে সরকার যোগান দেবে।
দ্রুতগামী মেট্রোরেলটি উত্তরা থেকে মিরপুর ও ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করবে। এতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে। প্রতি চার মিনিট পর পর এক এক করে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে। এই প্রকল্পের ১৬টি স্টেশন হলো ঃ উত্তরা, উত্তরা মধ্য ও দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় যাদুঘর, দোয়েল চত্বর, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমআরটি-৬ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরবাসী তাদের অতিকাক্সিক্ষত আরামদায়ক পরিবহনে ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। তারা বর্ধিত রাজধানীর যানজটের সড়কগুলোর পরিবহনে দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর যাত্রা থেকে নিষ্কৃতি পাবেন। প্রকল্পটি শুরু হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্র ৩৮ মিনিটে একজন যাত্রী উত্তরা পৌঁছতে পারবেন।