স্পোর্টস ডেস্ক :
দারুণ জয় দিয়ে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ। শুক্রবার সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে আফিফ হোসেনের ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে জিম্বাবুয়েকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী রবিবার সিরিজে টাইগাররা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের।
জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৪৫ রানের জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ২৬ বলে ৮টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৫২ রান করেন। ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফিফের এটি প্রথম অর্ধশত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফিফের এটি ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ।
আফিফকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ২৪ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। দলীয় ৬০ রানে বাংলাদেশের ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। এরপর ৮২ রানের জুটি গড়েন আফিফ ও মোসাদ্দেক। ব্যাটিংয়ে নেমে চার দিয়ে রানের খাতা খুলেন আফিফ। এরপর দারুণ সব শট খেলে দলকে জয়ের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে ইনিংসের শেষ ওভারে তিনি আউট হয়ে যান। আফিফ আউট হয়ে গেলে মোসাদ্দেকের সঙ্গে জুটি গড়ে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুয়ের কাইল জারভিস ২টি, সাতারা ২টি, বার্ল ১টি ও মাদজিভা ২টি করে উইকেট শিকার করেন।
দলীয় ২৬ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙে বাংলাদেশের। সাতারার করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে বোল্ড হন ওপেনার লিটন দাস। আর জারভিসের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অফে মাদজিভার হাতে ক্যাচ হন সৌম্য। ফেরার আগে ১৪ বলে ১৯ রান করেন লিটন। আর ৭ বলে ৪ রান করেন সৌম্য।
চতুর্থ ওভারেই ফিরে যান দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন তিনি। এক বল খেলে তিনি রানের খাতা খুলতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে সাতারার বলে স্লিপে মাসাকাদজার হাতে ক্যাচ হন সাকিব আল হাসান। তিন বলে এক রান করেন তিনি।
এরপর ২৭ রানের জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমান। নবম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই রিয়াদকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রায়ান বার্ল। রিভিউ নিয়েও রিয়াদ বাঁচতে পারেননি। দশম ওভারে মাদজিভাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে ক্যাচ হন সাব্বির। ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন বার্ল।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামে জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৬৩ রানে ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভালো সংগ্রহ দাঁড় করায় তারা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে রায়ান বার্ল ও মুতোমবোদজির অপরাজিত ৮১ রানের জুটির উপর ভর করে নির্ধারিত ১৮ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪৪ রান সংগ্রহ করে তারা।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৩২ বলে পাঁচটি চার ও চারটি ছক্কার সাহায্যে ৫৭ রান করে অপরাজিত থাকেন বার্ল। ৩৪ রান করেন হ্যামিলটন মাসাকাদজা। ২৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মুতোমবোদজি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাইজুল ইসলাম ১টি, মোস্তাফিজুর রহমান ১টি, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১টি ও মোস্তাফিজুর রহমান ১টি করে উইকেট শিকার করেছেন।
ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে প্রথম উইকেট হারায় দলীয় ৭ রানে। শুরুতেই আঘাত হানেন তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিংয়ে এসে ব্রেন্ডন টেইলরকে ফিরিয়ে দেন তিনি। শর্ট থার্ডম্যানে রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন টেইলর। ৫ বলে ৬ রান করেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেটে দেখা পান তাইজুল।
তাইজুলের পর আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের সপ্তম ওভারে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ক্রেইগ আরভিনকে ফেরান তিনি। ১৪ বলে ১১ রান করেন আরভিন।
শুরু থেকেই চালিয়ে খেলছিলেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক হ্যামিলটন মাসাকাদজা। কিন্তু তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দলীয় ৫৬ রানে ফিরে যান মাসাকাদজা। মিড-অফে ডাইভ দিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন সাব্বির রহমান। ২৬ বলে ৩৪ রান করেন মাসাকাদজা।
জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ফেরার পরের ওভারেই মোসাদ্দেক বোলিংয়ে এসে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান শন উইলিয়ামসকে। দলীয় ৬৩ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে সফরকারীদের। সাকিব-মোস্তাফিজ মিলেন রান আউট করেন মারুমাকে। এরপর আর কোনো উইকেট হারায়নি জিম্বাবুয়ে।
ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আউটফিল্ড ভেজা থাকায় তা শুরু হয় আটটায়। ম্যাচের ওভার কমিয়ে ১৮ ওভার করা হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৩ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে ইনিংস: ১৪৪/৫ (১৮ ওভার)
(ব্রেন্ডন টেইলর ৬, হ্যামিলটন মাসাকাদজা ৩৪, ক্রেইগ আরভিন ১১, শন উইলিয়ামস ২, মারুমা ১, বার্ল ৫৭*, মুতোমবোদজি ২৭*; সাকিব আল হাসান ০/৪৯, তাইজুল ইসলাম ১/২৬, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১/২৬, মোস্তাফিজুর রহমান ১/৩১, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ১/১০)।
বাংলাদেশ ইনিংস: ১৪৮/৭ (১৭.৪ ওভার)
(লিটন দাস ১৯, সৌম্য সরকার ৪, সাকিব আল হাসান ১, মুশফিকুর রহিম ০, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৪, সাব্বির রহমান ১৫, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৩০*, আফিফ হোসেন ৫২, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৬*; শন উইলিয়ামস ০/৩১, কাইল জারভিস ২/৩১, টেন্ডাই সাতারা ২/৩২, রায়ান বার্ল ১/১৭, মাদজিভা ২/২৫)। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ: আফিফ হোসেন (বাংলাদেশ)।