৩৯ দিন পর কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল ভারত, খুলে দেয়া হয়েছে ফোন ও মোবাইল সেবা

23

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩৯ দিন পর নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি তুলে নিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। খুলে দেয়া হয়েছে ফোন লাইন ও মোবাইল সেবাও। এই তথ্য জানিয়েছেন কাশ্মীর সরকারের জনসংযোগ ও তথ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তবে তারা জানিয়েছেন, হজরতবাল এলাকায় নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। আর লাদাখ ও কাশ্মীরকে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করতে পার্লামেন্টে বিল পাস হয়। এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে মোতায়েন করা হয় বিপুলসংখ্যক সেনা। জারি করা হয় বিধিনিষেধ। টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অনেকেই নিজেদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীসহ শত শত মানুষকে আটকের কথা জানা গেলেও মোট আটকের সংখ্যা বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি সরকার। এর আগে আংশিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও জীবনযাত্রায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। দোকানপাট বন্ধই ছিল, ফাঁকা ছিল স্কুলগুলোও। সড়কগুলোতে খুব বেশি গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি।
ভারত সরকারের জারি করা লকডাউনের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের দ্বারস্থ হন অনেকেই। রাজনীতিকদের আটকের বিরুদ্ধেও আদালতে পিটিশন জমা পড়ে। আদালত আইনের এক শিক্ষার্থী, সিপিএম’র সিতারাম ইয়েচুরি ও মেহবুবা মুফতির মেয়েকে তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে নির্দেশ দেয়। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে সুপ্রীমকোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানি এখনও শুরু হয়নি। এক ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এদের অনেককেই জননিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাশ্মীরের জন্য প্রণীত এই বিশেষ আইনের অধীনে বিনা বিচারে যে কাউকে দুই বছর পর্যন্ত আটক রাখা যায়। কাশ্মীরের জনসংযোগ অধিদফতর এক বিবৃতিতে জানায়, সব এলাকা থেকেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। এখন গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ল্যান্ড ফোন লাইন কাজ করছে এবং মোবাইল পরিষেবাও চালু করা হয়েছে। তবে হজরতবাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আবারও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, হজরতবালে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর আগে থেকে বহাল নিষেধাজ্ঞা পাঁচটি থানায় বলবত রয়েছে।
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে ৫৮ দেশের সমর্থন : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে ৫৮ দেশ কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। কাশ্মীরে কড়াকড়ি তুলে নেয়া এবং কাশ্মীরীদের অধিকার রক্ষার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবিকে বেগবান করে ভারতের ওপর চাপ বাড়িয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার ইমরান খান পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়ার জন্য ওই দেশগুলোর প্রশংসা করেন।
এক টুইটে ইমরান বলেন, ‘১০ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে যোগ দেয়া ৫৮ দেশকে সাধুবাদ জানাই। তারা ভারতের শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করা, অবরোধ ও অন্য কড়াকড়ি তুলে নেয়া, কাশ্মীরীদের অধিকার রক্ষা এবং সম্মান প্রদর্শনসহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের (ইউএনএসসি) প্রস্তাবনার মাধ্যমে কাশ্মীর বিরোধ সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবিকে জোরাল করছে।’ দ্বিতীয় আরেকটি টুইটে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা, আন্তর্জাতিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় নানা চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে কাশ্মীর বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মানবাধিকার পরিষদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আহ্বানকে আমি স্বাগত জানাই।’