শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ

31

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ রবিবার শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা। দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা সাড়ম্বরে উদযাপন করবে। ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ এই অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বোধি প্রাপ্তি আর মহাপরিনির্বাণ- এই স্মৃতি বিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসাবে পালন করেন বুদ্ধ ভক্তরা। রাষ্ট্রীয় ছুটির এদিনের শুরুতে শান্তি শোভাযাত্রা ও বৌদ্ধ মঠ ও মন্দিরগুলোতে দিনব্যাপী প্রদীপ প্রজ্বালন, পূজা ও প্রার্থনার আয়োজন করবে বুদ্ধের আদর্শ অনুসারী বৌদ্ধ সম্প্রদায়। এ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ প্রজ্বালন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও বুদ্ধ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মানব জাতির সর্বাঙ্গীন শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বুদ্ধ পূর্ণিমা নামে পরিচিত। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার পৃথক বাণীতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়সহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় সম্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদ। সেখানে অংশ নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি অবদমিত করতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবগুলো শুধুমাত্র সেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের ঈদ উৎসবে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে, উৎসবে শামিল হয়। বুদ্ধ পূর্ণিমার সময় যখন ফানুস ওড়ায়, সেই আনন্দের সঙ্গে সব সম্প্রদায়ের মানুষ শামিল হয়। দুর্গা পূজার সময় সব সম্প্রদায়ের মানুষ শামিল হয়। এগুলো ধর্মীয় উৎসব হলেও এগুলো আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে। হাছান মাহমুদ বলেন, সব সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যারা মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে তাদের অবদমিত করতে হলে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে এই বাংলাদেশ রচিত হয়েছিল। হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছব, জাতির পিতার স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছব।
বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, পূর্বজন্মে বোধিস্বত্ব সকল পারমি পূরণ করে সন্তোষকুমার নামে যখন স্বর্গে অবস্থান করছিলেন, তখন দেবগণ তাকে জগতের মুক্তি এবং দেবতা ও মানুষের নির্বাণ পথের সন্ধান দানের জন্য মনুষ্যকুলে জন্ম নিতে অনুরোধ করেন। দেবতাদের অনুরোধে বোধিস্বত্ব সর্বদিক বিবেচনাপূর্বক এক আষাঢ়ী পূর্ণিমায় স্বপ্নযোগে মাতৃকুক্ষিতে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম লাভ করেন। তার জন্ম হয়েছিল লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষ ছায়ায় উন্মুক্ত আকাশতলে। তার নিকট জাতি, শ্রেণী ও গোত্রের কোন ভেদাভেদ ছিল না। তিনি মানুষকে মানুষ এবং প্রাণীকে প্রাণিরূপেই জানতেন এবং এর প্রাণসত্তার মধ্যেই যে কষ্টবোধ আছে তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন। তাই তিনি বলেছিলেন, সবেব সত্তা ভবন্তু সুখীতত্তা জগতের সব প্রাণী সুখী হোক।