কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু এখন ভয় আর আতঙ্কে জঙ্গলে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ধরা পড়লেই দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে এমন আতঙ্কেই জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন বহু বাংলাদেশি শ্রমিক।
সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যম মালয়েশিয়াকিনির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর মালয়েশিয়ায় কাজ হারিয়েছেন এমন ১৬ বাংলাদেশি কুয়ালালামপুরের কাছে একটি হাইওয়ের কাছে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। যে কোনো সময় ধরা পড়তে পারেন এমন আতঙ্কে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা আশায় আছেন কবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা নতুন করে অনুমোদন পাবেন।
বরিশাল থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানো আল আমিন নামের এক শ্রমিক বলেন, বাংলাদেশে আমার বাড়িতে থাকা গরুও আমার চেয়ে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছে। শ্রমিকদের একটি বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় আল আমিন এবং আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি শ্রমিকদের বের করে দেয় তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের দুই সহকর্মীকে বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফলে তাদের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে এই আতঙ্কে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
তবে এ বিষয়ে ওই বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়াকিনি। অপরদিকে, বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফোনে কথা বলা, ধুমপান করা, কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী জুতা না পরাসহ বেশ কিছু কারণে কোম্পানি নিয়মভঙ্গের অপরাধে এসব শ্রমিককে শাস্তি দিয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত অনেক শ্রমিককেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের নোয়াকান্দি গ্রামের মান্নান মিয়া বলেন, তিনি কমল চন্দ্র দাস নামের এক দালালকে ১২ হাজার রিঙ্গিত দিয়েছিলেন। ওই দালাল তার টাকা মেরে দিয়েছে। এফকেআর কোম্পানির নামে প্রফেশনাল ভিসায় মালয়েশিয়ায় এলেও এখনও তিনি অবৈধ হয়ে আছেন।
তিনি বলেন, আমার সব স্বপ্ন গিলে খেয়েছে দালালরা। পরিবারকে সাহায্য করতে চেয়েছি। অথচ আমি এখন নিজের জীবন নিয়েই আতঙ্কে আছি। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে রাতে এসে এই জঙ্গলে ঘুমাতে হচ্ছে। বেশিরভাগ শ্রমিকরাই দালালের মাধ্যমে মালেয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
তাদেরকে বৈধভাবে সে দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে দালালরা। ফলে এদেশ থেকে দালালদের টাকা পয়সা দিয়ে নিঃস্ব হয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়ে আরও বিপাকে পড়ছেন এসব শ্রমিকরা। সেখানে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় একে তো কোনো কাজ পাচ্ছেন না তারপর কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়ছে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।