সব দুর্ঘটনা যে দুর্ঘটনা নয়, কোনো কোনোটি যে পরিকল্পিত ঠাণ্ডা মাথার খুন, তা আবার প্রমাণিত হয়ে গেল। গত শনিবার রাতে উত্তরায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন মেহেদী হাসান ছোটন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়াসির আলভী রব। এ ছাড়া গাজীপুরের কালিয়াকৈর, রাজশাহীর বাগমারা ও পবা, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, বরগুনার আমতলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জ, খুলনা, পাবনার চাটমোহর এবং ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষক, পুলিশ, ব্যাংক কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতাসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন।
উত্তরায় শনিবার রাতের ঘটনাটি যদি পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে ঘটনার পরম্পরাই প্রমাণ করে দেবে, এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। পরিকল্পিতভাবেই চাপা দেওয়া হয়েছে মেহেদী হাসান ছোটন ও ইয়াসির আলভী রবকে। ইয়াসির আলভী রবের বাবা পারভেজ রব একজন সংগীত পরিচালক। তিনি গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে ভিক্টর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত হন। পারভেজ রব যেখানে নিহত হয়েছিলেন, ওই এলাকায় ওই ঘটনার পর থেকে ভিক্টর পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ ছিল বলে জানা যায়। গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিক্টর পরিবহনের লোকজন পারভেজ রবের বাসায় আসে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু এতে রবের পরিবার রাজি না হলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি ও হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় রবের স্ত্রী রোমানা সুলতানা তুরাগ থানায় অভিযোগ দিতে যান। একই সময় পারভেজ রবের কুলখানির কাঁচাবাজার করতে তুরাগের কামারপাড়া এলাকা থেকে আব্দুল্লাহপুরের উদ্দেশে রওনা হন ছোটন ও আলভী। সেখানে একটি ভিক্টর পরিবহন দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করার জন্য তাঁরা উঠতে যান। এ সময় হেলপার দরজা বন্ধ করে দেন। একই সময় ভিক্টর পরিবহনের আরেকটি বাস তাঁদের দুই বাসের মাঝে ফেলে চাপা দেয়। এতে দুজনই গুরুতর আহত হন। পথচারীরা তাঁদের উদ্ধার করে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মেহেদী হাসান ছোটনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এটি পরিষ্কার যে মীমাংসায় পরিবারের লোকজন রাজি না হওয়ায় বাস মালিকরা যে হুমকি দিয়েছিলেন, তা কার্যকর হয়েছে ওই রাতেই। বাস মালিক ও চালকরা এ ধরনের নির্বিচার হত্যার লাইসেন্স কার কাছ থেকে পেয়েছেন? এর পরও ভিক্টর পরিবহনের বাস রাস্তায় চলে কী করে? এই নিষ্ঠুর ঘাতকদের দ্রুত বিচারের কোনো বিকল্প আছে কি?